আবারও ইউরোপের ‘দুর্বল’ দেশ হওয়ার পথে জার্মানি?
জার্মানির অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছরে একাধিক সংকটে ইউরোপের কেন্দ্রের এই দেশটির ব্যবসার ধরনের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে।
চলতি শতকের শুরুর দিকে ব্যবসাবিষয়ক ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’ জার্মানির অর্থনীতি সম্পর্কে একটি রায় দিয়েছে। পত্রিকাটির মতে, জার্মানি হচ্ছে ইউরোপের ‘সিক ম্যান’৷ ইংরেজি এই বাগধারার অর্থ হচ্ছে কোনও এক শক্তিশালী গোষ্ঠীর সবচেয়ে দুর্বল সদস্য।
বিজ্ঞাপন
প্রভাবশালী পত্রিকাটির এমন মূল্যায়নের পর নড়েচড়ে বসে জার্মান সরকার, নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। ২০১৪ সাল নাগাদ বার্লিন ও লন্ডনের একদল অর্থনীতিবিদ জানান, ‘সিক ম্যান’ থেকে ‘ইকোনমিক সুপারস্টারে’ পরিণত হয়েছে জার্মানি।’
আরও পড়ুন: জার্মানিতে মিলল ৩ হাজার বছরের পুরোনো তরবারি
তবে জার্মান অর্থনীতি আবারও ধুঁকতে শুরু করেছে। টানা দুই কোয়ার্টার ধরে অর্থনৈতিক আউটপুট পড়তির দিকে। সর্বশেষ কোয়ার্টারে জার্মানির জিডিপি আগের কোয়ার্টারের মতোই স্থবির হয়ে আছে। আর সব অর্থনৈতিক সূচকও পড়তির দিকেই রয়েছে।
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ক্লিমেন্স ফ্যুস্ট বলছেন, ‘জার্মানির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে।’
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য সংস্থাটি প্রতি মাসে নয় হাজারের মতো নির্বাহীর ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনমাস ধরে পরিস্থিতি নিম্নমুখী এবং চলতি কোয়ার্টারে জিডিপি আরও নিচের দিকে নামবে।
জার্মান অর্থনীতির এই নিম্নমুখী আচরনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলোর একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক নীতি। ফেডারেল রিজার্ভ, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং অন্যরা সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে চায়। এতে করে ঋণ নেয়াটা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকের পক্ষে আরেও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। কিন্তু ধীরে হলেও তার প্রভাব পড়বে জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণখাতে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহও কমে যাবে।
সুদের হার বাড়ানো হলে অর্থনীতির গতিশীলতা মন্থর হতে পারে। তবে ফ্রান্স এবং জার্মানির মতো অন্যান্য ইউরোজোনভুক্ত দেশ এই পরিস্থিতি আরেও ভালোভাবে সামলেছে।
আরও পড়ুন: বছরে ৬০ হাজার অভিবাসীর কাজের সুযোগ জার্মানিতে
জার্মানিকে মূলত পিছিয়ে রেখেছে অবকাঠামোগত সমস্যা। এ দেশের অর্থনীতির ধরন হচ্ছে, সস্তায় জ্বালানি (রাশিয়া থেকে), কাঁচামাল এবং পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এমন পণ্য আমদানি করে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমানের এবং দামি পণ্য হিসেবে রপ্তানি করা।
কিন্তু ব্যবসার এই ধরন আর কাজ করছে না। গত কয়েকবছরের একাধিক সংকট জার্মানির দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে। জ্বালানি বেশি দরকার এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে। আর খরচ বেড়ে যাওয়ায় যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন প্রক্রিয়া অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে তা আর ফিরে আসছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির অর্থনীতিকে আবারেও শক্তিশালী করতে হলে জ্বালানি সাশ্রয়ী উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। এজন্য অতীতের প্রযুক্তি বাঁচাতে বিনিয়োগ না করে নতুন প্রযুক্তির দিকে নজর দিতে হবে যা সাশ্রয়ী এবং কার্যকর।
টিএম