ভারতে ধর্মীয় সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন মুসলিম ধর্মগুরু। এছাড়া এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলোর মিছিলে এই ঘটনা ঘটে বলে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানায় হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলোর মিছিল চলাকালীন ধর্মীয় সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মুসলিমদের অধিকার রক্ষা না করলে ভারত ভেঙে টুকরো হতে পারে: ওবামা

পুলিশ বলছে, নিহতদের মধ্যে একজন মুসলিম ধর্মগুরু এবং অন্য দুইজন ‘হোম গার্ড’ সদস্য। মূলত হোম গার্ড সদস্যরা দাঙ্গা ও জনসাধারণের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করে থাকে।

বিবিসি বলছে, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রয়েছে এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হরিয়ানার নুহ শহরে এই সংঘর্ষ হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমএল খাট্টার এই ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সোমবার বিকেলে হরিয়ানা রাজ্যের নুহ শহরে বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে সহিংসতা শুরু হয়। ভিডিও ফুটেজে জনতাকে পাথর ছুঁড়ে মারতে দেখা যায়। এছাড়া গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতে এবং দোকান ভাঙচুর করতেও দেখা যায় ভিডিওতে।

এছাড়া মিছিলে অংশ নিতে ওই শহরে থাকা দুই হাজারেরও বেশি লোক সংঘর্ষের কারণে একটি মন্দিরে আটকা পড়েছিল। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা’ এবং জীবন ও সম্পত্তির বিপদের কথা উল্লেখ করে নুহ শহরে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছে রাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন: মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বাইডেনকে ৭৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার চিঠি

বিবিসি বলছে, সোমবার বিকেলে শুরু হওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এই সহিংসতা খুব দ্রুতই রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত ফরিদাবাদ, পালওয়াল এবং গুরুগ্রামের (সাবেক গুরগাঁও) মতো পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গুরুগ্রামে একটি মসজিদেও আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা।

পরে হরিয়ানা সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়েছে। অবশ্য বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন।

আরও পড়ুন: এবার আজমীর শরীফকে শিব মন্দির বলে দাবি হিন্দু সংগঠনের

আঞ্চলিক ভারতীয় ন্যাশনাল লোকদল পার্টির আইনপ্রণেতা অভয় সিং চৌতালা বলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে চৌতালা বলেছেন, ‘গত দুই দিন ধরে নুহতে আইনশৃঙ্খলার সম্ভাব্য অবনতি হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট ছিল।’

তিনি বজরং দলের সদস্য মনু মানেসারের অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওকে উল্লেখ করে বলেন, তিনি নুহের ওই মিছিলে যোগ দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন।

মানেসার একজন সুপরিচিত গরুর পাহারাদার যিনি নিয়মিত গরু পরিবহনকারীদের প্রশ্ন করার ভিডিও আপলোড করে থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা হিন্দু নজরদারি গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং গবাদি পশু ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম।

আরও পড়ুন: মহানবীকে কটূক্তি করায় ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে, দাবি ১৫ দেশের

চৌতালা প্রশ্ন করেন, ‘যখন মিছিলে তার উপস্থিতির খবর আগে থেকেই ছিল, তখন পুলিশ কেন পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি?’

এদিকে সোমবার রাতে শান্তির জন্য আবেদন করার পাশাপাশি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী এমএল খাট্টার বলেছেন, সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু ফরিদাবাদ, পালওয়াল ও গুরুগ্রামে স্কুল বন্ধ এবং ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

টিএম