বলছে জাতিসংঘের রিপোর্ট
বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে আল-কায়েদা
বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা। আর এ লক্ষ্যে জঙ্গিগোষ্ঠীটি তার আঞ্চলিক মিত্রদলগুলোকে আবারও ‘সংগঠিত’ করছে। আর এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে।
কয়েকদিন আগে ওই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় বলে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্য অ্যানালিটিক্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাংশন্স মনিটরিং টিম অব দ্য ১২৬৭ আইএসআইএল (দায়েশ) এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আল-কায়েদা স্যাংশন্স কমিটির ৩২তম প্রতিবেদনটি গত ২৫ জুলাই প্রকাশিত হয়। আর সেখানেই বাংলাদেশ, ভারতের জম্মু ও কাশ্মির এবং মিয়ানমার নিয়ে ওই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
মূলত আল কায়েদা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের বর্তমান তৎপরতা নিয়ে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পর্যবেক্ষণ এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে একটি সদস্য রাষ্ট্রের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারতের জম্মু ও কাশ্মির এবং মিয়ানমারে কার্যক্রম বিস্তৃত করতে আল কায়েদা এখন তাদের ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএসকে (আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট) সংগঠিত করছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সেই সদস্য রাষ্ট্রটি আরও উল্লেখ করেছে, একিউআইএস-এর কিছু সীমিত সংখ্যক সদস্য আইএসআইএল-কে (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত- খোরাসান) এর সাথে যোগদান বা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
আল-কায়েদার মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানে এখনও এই গোষ্ঠীটির ৩০ থেকে ৬০ জন সদস্য রয়েছে এবং তাদের যোদ্ধার সংখ্যা ৪০০ জন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবারের সদস্য ও সমর্থক মিলিয়ে এ সংখ্যা ২ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার আনুমানিক ২০০ জন যোদ্ধা রয়েছে। আর তাদের আমির বা প্রধান হচ্ছেন ওসামা মেহমুদ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিছু সদস্য রাষ্ট্র সাইফ আল-আদলকে আল-কায়েদা প্রধান হিসেবে আইমান আল-জাওয়াহিরির উত্তরসূরি বলে মূল্যায়ন করেছে এবং তিনি এখনও ইরানে রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া আফগানিস্তানে সক্রিয় আরেক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএল-কে কে এখন আফগান ভূখণ্ড ও এই অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। পরিবারের সদস্যসহ আইএসআইএল-কে এর ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সানাউল্লাহ গাফারিকে আইএসআইএল-কে-এর সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী নেতা হিসেবে দেখা হয় এবং একটি সদস্য রাষ্ট্র জানিয়েছে, গত জুন মাসে আফগানিস্তানে গাফারি নিহত হয়েছেন, তবে এটি এখনও নিশ্চিত হওয়া বাকি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তান সন্ত্রাসবাদের জন্য এখনও বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ স্থান হিসেবে রয়ে গেছে এবং দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২০টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাজ করছে। একটি সদস্য রাষ্ট্র মূল্যায়ন করেছে, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে, সমস্ত অঞ্চলে তাদের নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করা এবং ধর্মতান্ত্রিক আধা-রাষ্ট্রীয় সত্তা গড়ে তোলা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান ও জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার মধ্যে সম্পর্ক এখনও খুবই ঘনিষ্ঠ এবং সহানুভূতিশীল। তালেবান গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদী উদ্দেশ্যে আফগান মাটি ব্যবহার হতে দিচ্ছে না; এমন কথা প্রচার করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আল-কায়েদা আফগানিস্তানে গোপনে কাজ করে থাকে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘শাসকগোষ্ঠী তালেবান কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আল-কায়েদার সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনপ্রশাসন সংস্থাগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং তারাই মূলত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আল-কায়েদার বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।’
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য আল-কায়েদার সক্ষমতা কমে গেলেও তেমন হামলা চালানোর বিষয়ে তাদের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আদর্শিক এবং গোপনে পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ ও সমাবেশ ঘটাতে আফগানিস্তানকে লজিস্টিক হাব হিসেবে ব্যবহার করছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
টিএম