রাশিয়ায় আবার যুদ্ধ ফিরে আসছে, হুঁশিয়ারি জেলেনস্কির
রাশিয়ায় আবার যুদ্ধ ফিরে আসছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ড্রোন হামলার পর তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
রোববারের ওই হামলায় মস্কোর দু’টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার (৩১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী মস্কোতে ড্রোন হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়ায় আবার যুদ্ধ ফিরে আসছে। জেলেনস্কি বলেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সময় রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা হওয়াটা ‘অনিবার্য, স্বাভাবিক এবং একেবারে ন্যায্য প্রক্রিয়া’।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার তিনটি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মস্কো শহরের উপকণ্ঠে একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। অন্য দু’টি ড্রোনকে ‘ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ারের মাধ্যমে দমন করা হয়’ এবং সেগুলো একটি অফিস কমপ্লেক্সে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
ড্রোন হামলার ঘটনার পর মস্কোর একটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, ড্রোন হামলার ঘটনার পর রাজধানী মস্কোর ভনুকোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘প্রস্থান এবং আগমনী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ফ্লাইটগুলোকে অন্যান্য বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়’।
অবশ্য এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরটির কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়া রোববার ভোররাতের এই ড্রোন হামলার জন্য কিয়েভকে দায়ী করেছে মস্কো।
এই পরিস্থিতিতে রোববার পশ্চিম ইউক্রেনীয় শহর ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক থেকে ভিডিও ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেন, ইউক্রেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তার ভাষায়, ‘আজ তথাকথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর ৫২২তম দিন, যা মাত্র কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে বলে মনে করেছিল রাশিয়ান নেতৃত্ব। ধীরে ধীরে, যুদ্ধ রাশিয়ার ভূখণ্ডে ফিরে আসছে। রুশ সামরিক ঘাঁটিতেও যুদ্ধ ফিরছে এবং এটি অনিবার্য, স্বাভাবিক এবং একেবারে ন্যায্য একটি প্রক্রিয়া।’
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, ড্রোন হামলার ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। মস্কো শহরের মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, ‘শহরের দু’টি অফিস টাওয়ারের সম্মুখভাগ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’। এই ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলোতে ভবনগুলোর কোণে বেশ কয়েকটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া হামলার পর ধ্বংসাবশেষও মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে দেখা যায়।
লিয়া নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি আগুন এবং ধোঁয়া দেখতে পেয়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমরা একটি বিস্ফোরণ শুনতে পাই এবং এটি ঢেউয়ের মতো ছিল, সবাই লাফিয়ে উঠল। তখন প্রচুর ধোঁয়া ছিল এবং কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পরে ওপর থেকে আগুন দেখতে পাওয়া যায়।’
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০০ কিমি (৩১০ মাইল) দূরে অবস্থিত রাশিয়ার রাজধানী মস্কো এবং এর আশপাশের শহরতলি চলতি বছর বেশ কয়েক দফায় ড্রোন হামলা শিকার হয়েছে। যদিও যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মস্কো ও আশপাশের এলাকা খুব কমই ইউক্রেনীয় হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে অবস্থিত রাশিয়ান শহরগুলোসহ ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং রোববারের এই হামলাটি সেটিরই সর্বশেষ উদাহরণ। রাশিয়া এই ধরনের হামলার জন্য বরাবরই ইউক্রেনকে দায়ী করে আসছে।
এছাড়া রোববার ভোরের এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা’ বলে অভিহিত করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
টিএম