উত্তর কোরিয়ায় সফররত রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। সেখানে উভয়পক্ষই তাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এছাড়া শোইগুকে সাথে করে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতেও নিয়ে যান কিম। সেখানে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে উত্তর কোরিয়ার নিষিদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে দেখা করেছেন এবং সেখানে উভয় পক্ষই সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে।

কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেখা করার সময় কিমকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন শোইগু। জবাবে শোইগুর নেতৃত্বে সামরিক প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান কিম।

এতে আরও বলা হয়, কিম ও শোইগুর মধ্যকার এই বৈঠকটি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার ‘কৌশলগত এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে আরও গভীরতর করেছে।’

মূলত ১৯৫৩ সালে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের ৭০তম বার্ষিকীতে যোগ দিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থান করছে। তারা সেখানে চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন পলিটব্যুরো সদস্য লি হংঝং। রুশ ও চীনা এই দু’টি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার পিয়ংইয়ংয়ে ‘বিজয় দিবসের’ ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনে অংশ নেবে।

কেসিএনএ জানিয়েছে, রুশ এই প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছায়। এরপর বুধবার সের্গেই শোইগুর সঙ্গে দেখা করেন কিম জং উন। পরে কিমের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে যান রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে উত্তর কোরিয়ার নিষিদ্ধ সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়।

রয়টার্স বলছে, রাশিয়ান এবং চীনা সমর্থনে গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের অধীনে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এই দুই দেশের প্রতিনিধি দল পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা তাদের ঐক্যবদ্ধ সংহতি প্রদর্শন করেছে।

এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সের্গেই শোইগু হচ্ছেন রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি উত্তর কোরিয়ায় সফর করছেন। মূলত করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নিজেদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল উত্তর কোরিয়া।

সেসময় নিজের নাগরিকদেরও দেশে ঢুকতে দিচ্ছিল না বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই দেশটি। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথম রাশিয়ান ও চীনা প্রতিনিধি দল উত্তর কোরিয়ায় গেছে এবং এটি পিয়ংইয়ংয়ের জন্য বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, কেসিএনএ তাদের রিপোর্টে ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেনি। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাং সান নাম বলেছেন, রাশিয়ার ‘ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধ’ এবং তার (রাশিয়ার) সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছে উত্তর কোরিয়া।

কেসিএনএ জানিয়েছে, নতুন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রদর্শনীর সফরে শোইগুকে সাথে নিয়ে ঘুরেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন কিম।

রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার প্রকাশিত বেশ কিছু ছবিতে, কিম এবং তার অতিথিদের উত্তর কোরিয়ার কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। আরেকটি ছবিতে যে অস্ত্র দেখা যাচ্ছে সেটিকে নতুন একটি ড্রোন বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

একজন বিশ্লেষক বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরিদর্শনে শোইগুর উপস্থিত হওয়া এটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।

এছাড়া কোরিয়ান সেন্ট্রাল ব্রডকাস্টিং স্টেশন (কেসিবিএস)-এর বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে একটি ভোজসভায় অংশ নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন শোইগু।

উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সের্গেই শোইগু এ মন্তব্য করেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

টিএম