রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)

চীন সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আগামী অক্টোবর মাসে দেশটিতে সফরে যেতে পারেন তিনি। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণও পেয়েছেন পুতিন।

রুশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী অক্টোবরে চীন সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে মঙ্গলবার ক্রেমলিনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

পুতিনের পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার একাধিক বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, পুতিনের এই সফরটি চীনে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ ফোরামের সাথে একইসময়ে হতে পারে।

বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে এশিয়াকে ইউরোপীয় এবং আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত করার অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সম্পৃক্ত রয়েছে।

উশাকভ বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য পুতিন কোনো এক সময়ে তুরস্কেও সফরের পরিকল্পনা করছেন। যদিও সেই সফরের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

এছাড়াও আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে গ্রুপ অব ২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য ক্রেমলিন পুতিনের জন্য আমন্ত্রণপত্র পেয়েছে বলে জানান তিনি। উশাকভ বলেন, ভারতে সেই অনুষ্ঠানে রাশিয়ান এই প্রেসিডেন্টের সশরীরে উপস্থিতির বিষয়টি এখনও বাতিল করে দেওয়া হয়নি, যদিও পুতিন ঠিক কিভাবে সেই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন সেটি এখনও ‘অস্পষ্ট’।

অবশ্য আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সম্মেলনে যোগ দিতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে পুতিন সেই অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে যেতে রাজি হয়েছেন বলে দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পুতিন রাশিয়ায় থাকলে সমস্যা নেই, তবে পুতিন যদি রাশিয়ার ভূখণ্ড ছেড়ে বের হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রযোজ্য হবে।

পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন। আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।

মূলত ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণের জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।

এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। এছাড়া রাশিয়ার মতো রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি চীন, তুরস্ক এবং ভারতও। আর তাই এসব দেশে আরও সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন পুতিন।

এপি বলছে, কয়েক মাস আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিন দিনের সফরে মস্কোতে গিয়েছিলেন। আর অক্টোবরে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলে সাত মাস পর ফের দেখা হবে পুতিন-জিনপিংয়ের। এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই দুই নেতার ব্যক্তিগতভাবে দেখা হয়েছিল।

তারও আগে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়ে আগ্রাসন শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২২ সালের বেইজিং শীতকালীন গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন পুতিন।

অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে এসেছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।

উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

টিএম