প্রেমের টানে সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন সীমা হায়দার নামে এক নারী। পরে তাকে নিয়ে ভারতে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো ভারতেও। তবে এবার আর পাকিস্তান থেকে ভারতে নয়, বরং ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে গেছেন এক নারী।

স্বামী-সন্তান ফেলে কেবল প্রেমিকের দেখা পেতে পাকিস্তানে ছুটে গিয়েছেন তিনি। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেমের টানে পাকিস্তানে চলে যাওয়া ভারতীয় ওই নারীর নাম অঞ্জু। ৩৪ বছর বয়সী এই নারী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি ওই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে।

এনডিটিভি বলছে, বিবাহিত এক ভারতীয় নারী তার ছেলে বন্ধুর সাথে দেখা করতে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে চলে গেছেন বলে রোববার পুলিশ জানিয়েছে। ফেসবুকে ওই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তাদের বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি ওই যুবকের প্রেমে পড়ে যান ভারতীয় ওই নারী।

৩৪ বছর বয়সী অঞ্জুর জন্ম উত্তর প্রদেশের কাইলোর গ্রামে হলেও রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় থাকতেন তিনি। অন্যদিকে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া তার পাকিস্তানি বন্ধুর নাম নাসরুল্লাহ। অঞ্জু এখন তার ২৯ বছর বয়সী এই পাকিস্তানি বন্ধুর সাথে দেখা করতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের আপার দির জেলায় রয়েছেন।

পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, নাসরুল্লাহ পেশাগতভাবে মেডিকেল সেক্টরে কাজ করেন এবং অঞ্জু কয়েক মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, অঞ্জু এক মাসের জন্য পাকিস্তান সফর করছেন এবং তার ছেলে বন্ধুকে বিয়ে করতে তিনি এখানে আসেননি। পাকিস্তানে প্রবেশের পর ভারতীয় এই নারী প্রাথমিকভাবে পুলিশের হেফাজতে থাকলেও জেলা পুলিশ তার ভ্রমণ নথি যাচাই করার পরে তাকে ছেড়ে দেয়।

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, ‘সকল ভ্রমণ নথিপত্র ঠিকঠাক থাকার পরে তাকে যেতে দেওয়া হয়েছিল। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনায় যাতে দেশের বদনাম না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দির থানার একজন কর্মকর্তা জানান, সিনিয়র পুলিশ অফিসার মোশতাক খাব এবং স্কাউটস মেজর তার নথিপত্র পরীক্ষা করার পর অঞ্জু ও তার বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে সংবাদমাধ্যমের খবরের পর রাজস্থান পুলিশের একটি দল আলওয়ার জেলার ভিওয়াদি শহরে অঞ্জুর বাড়িতে তার খোঁজ খবর নিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

অঞ্জুর স্বামী অরবিন্দ পুলিশকে বলেছেন, জয়পুরে যাওয়ার অজুহাতে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অঞ্জু। কিন্তু পরে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে, সে এখন পাকিস্তানে রয়েছে।

অরবিন্দ পুলিশকে বলেন, ‘সে তার বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আমি কয়েকদিন আগে তার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছিলাম এবং জানতে পারি, সে লাহোরে আছে।’

তিনি জানান, ২০০৭ সালে তারা বিয়ে করেন এবং তারপর থেকে একসঙ্গে বসবাস করছেন। তারা ভিওয়াদিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এবং তাদের ১৫ বছরের মেয়ে এবং ছয় বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে।

ভিওয়াদির সহকারী পুলিশ সুপার সুজিত শঙ্কর পিটিআইকে বলেছেন, অঞ্জুর স্বামী বলেছেন- তিনি বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তার বৈধ পাসপোর্টও রয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

অরবিন্দ মিডিয়াকে বলেন, তার স্ত্রী তার বোনকে বলেছেন যে- তিনি লাহোরে রয়েছেন এবং পরে তিনি (অঞ্জু) তার সাথে কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে আসতে বলবেন। তার আশা, তার স্ত্রী অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন।

অঞ্জুর স্বামী অরবিন্দ জানান, ২০২০ সালে তার স্ত্রীর পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। মূলত বিদেশে চাকরির আবেদনের জন্য পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন অঞ্জু।

এছাড়া তার স্ত্রী যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও সাথে যোগাযোগ রাখছেন তা তিনি জানতেন না বলেও জানান অরবিন্দ।

টিএম