সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, আগামী আগস্ট মাসে আমাদের সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। আমরা মেয়াদ শেষের আগেই বিদায় নেব এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার চলে আসবে

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের দুই অংশীদার পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) আগামী ৮ আগস্ট দেশটির জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হতে পারে বলে মঙ্গলবার একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এখনও সংসদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন জোটের অংশ পিডিএম এবং অন্যান্য সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে (সংসদের বিলুপ্তির) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংসদের উচ্চকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার তারিখের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

দেশটির বর্তমান জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের সাংবিধানিক মেয়াদ আগামী ১২ আগস্ট মধ্যরাতে শেষ হবে। অর্থাৎ দেশটির সংসদ যে তারিখে ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে উভয় রাজনৈতিক দল সম্মত হয়েছে তার চারদিন পর সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজ বলছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার তারিখ হিসেবে ৯ ও ১০ আগস্টও আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু আগাম ভেঙে দেওয়ায় যাতে কোনও বাধা না আসে সেজন্য আগামী ৮ আগস্টের বিষয়ে ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা রাজি হয়েছেন। 

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, দেশটির প্রেসিডেন্ট সরকারে থাকা দলগুলোর সিদ্ধান্তে অনুমোদন না দিলেও ৪৮ ঘণ্টা পর সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। দেশটির সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি ভেঙে দেওয়া না হয়, তাহলে জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে সংবিধানের ২২৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের সাংবিধানিক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যদি তা ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী আগস্ট মাসে আমাদের সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। আমরা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নেব এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার চলে আসবে।

এর আগে, সাংবিধানিক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশটির সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের জোটসঙ্গী পিপিপি।

• তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী?

আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সাথে সাথেই কেন্দ্রীয় সরকার তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবে। দেশটির সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ কয়েকদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচিত সব প্রতিনিধিদের মধ্যে কেবল জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ ক্ষমতায় থাকবেন। নব-নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকারের স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন না করা পর্যন্ত রাজা পারভেজ স্বপদে বহাল থাকবেন।

সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজকে চিঠি দেবেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিরোধীদের কাছে তিনটি নাম চাইবেন এবং নিজে তিনটি নাম প্রস্তাব করবেন।

যদি মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে দুই নেতার মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং তা তিন দিন ধরে চলে, তাহলে জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজস্ব বিভাগ ও বিরোধীদের সমান প্রতিনিধিত্বসহ বিদায়ী সংসদের ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন।

পরে একজনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে কমিটির হাতে তিন দিন সময় থাকবে। যদি সেটিও ব্যর্থ হয়, তাহলে দুই দিনের মধ্যে  মনোনীতদের নাম চূড়ান্ত করার জন্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে।

নির্বাচিত মনোনীত ব্যক্তি কেন্দ্রীয় নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতাও তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকবে।

সূত্র: জিও নিউজ, ডন।

এসএস