টানা প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। আর সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধের উত্তেজনা পৌঁছেছে বেলারুশেও। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে এক হাজারের বেশি সেনা মোতায়েনের কাজ শুরু করেছে পোল্যান্ড।

মূলত প্রতিবেশী বেলারুশে রাশিয়ার ওয়াগনার যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। রোববার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোল্যান্ড শনিবার তার পূর্ব সীমান্তে ১ হাজারের বেশি সৈন্য মোতায়েনের কাজ শুরু করেছে বলে পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। বেলারুশে রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিজেদের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন উদ্বেগ রয়েছে দেশটির।

গত জুন মাসে নাটকীয় বিদ্রোহের ঘটনায় ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রোস্তোভ প্রদেশে প্রবেশ করেন ওয়াগনার সেনারা। পুরো বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন প্রিগোজিন নিজে। প্রথমে তারা রোস্তোভের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করেন। এরপর মস্কোর দিকে অগ্রযাত্রা শুরু করেন।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনী যে কথিত বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন সেটি রোস্তোভের এই সদর দপ্তর থেকেই পরিচালনা করা হতো।

ওয়াগনার বাহিনীর বহরটি প্রথমে রোস্তোভে যায় এবং রোস্তভ-অন-ডন শহর দখল করে। পরে সেখান থেকে ভোরোনেজে গিয়ে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে এবং বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘোষণার আগে ওয়াগনার যোদ্ধারা মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের (১২৫ মাইল) মধ্যে পৌঁছে যায়।

পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের ওই লড়াই অনেকটা নাটকীয় ভাবেই থেমে যায়। পরে এই যোদ্ধাদের বেলারুশে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ দেয় রাশিয়া।

রয়টার্স বলছে, ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের বেলারুশে স্থানান্তর করার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই সিদ্ধান্ত সামরিক জোট ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় সদস্য পোল্যান্ডের মধ্যে ভয়ের জন্ম দিয়েছে যে, ওয়াগনার সেনাদের উপস্থিতি এই অঞ্চলে বৃহত্তর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাক টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘১২ ও ১৭ ম্যাকানাইজড ব্রিগেডের এক হাজার সেনা ও প্রায় ২০০ ইউনিট অস্ত্র-সস্ত্র দেশের পূর্ব সীমান্তে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার প্রস্তুতি হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াগনার যোদ্ধাদের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না করলেও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো বেলারুশে তাদের উপস্থিতিকেই এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর আগে গত রোববার পোল্যান্ড বলেছিল, বেলারুশের সাথে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে তারা ৫০০ পুলিশ সদস্য পাঠাবে।

উল্লেখ্য, পোল্যান্ডে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেলারুশ থেকে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টাকারী অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ডার গার্ডের মতে, গত শুক্রবার মরোক্কো, ভারত এবং ইথিওপিয়ার নাগরিকসহ ২০০ জনেরও বেশি লোক অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করে।

এছাড়া শনিবার ওয়াগনারের একজন সিনিয়র কমান্ডারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভাড়াটে এই গ্রুপের যোদ্ধারা বেলারুশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

টিএম