ফাইল ছবি

টানা প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ বোমা ইউক্রেনের হাতে পৌঁছাবে।

তবে এই বিষয়ে মার্কিন মিত্র দেশগুলোর মধ্যেই দ্বিমত দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ আবার এই সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতাও করেছে। অবশ্য ইউক্রেন দাবি করেছে, এই বোমা তারা রাশিয়ায় ব্যবহার করবে না। রোববার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখলদার রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের জন্য ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার অস্ত্র সরবরাহ করার কথা গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া কিয়েভে ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর মার্কিন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ।

তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্র রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের ভূখণ্ড মুক্ত করতে সাহায্য করবে। কিন্তু একইসঙ্গে এসব অস্ত্র রাশিয়ায় ব্যবহার করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

রেজনিকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব যুদ্ধাস্ত্র ইউক্রেনীয় সৈন্যদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেন এসব অস্ত্র ব্যবহারের রেকর্ড কঠোরভাবে সংরক্ষণ করবে এবং সেসব তথ্য কিয়েভের অংশীদারদের সাথে বিনিময়ও করবে।

রেজনিকভ টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার - আমাদের অস্থায়ীভাবে দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে মুক্ত করতে হবে এবং আমাদের জনগণের জীবন বাঁচাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন এই অস্ত্র ব্যবহার করবে শুধুমাত্র আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অঞ্চল দখলমুক্ত করার জন্য। রাশিয়ার সরকারিভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ডে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না।’

রয়টার্স বলছে, ১০০ টিরও বেশি দেশে ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ। ক্লাস্টার বোমা রকেট সদৃশ একটি কাঠামোর ভেতর থাকে। এ বোমা বিমান, কামান ও রকেট লঞ্চার থেকে ছোঁড়া যায়। ক্লাস্টার বোমা যখন ছোঁড়া হয় তখন এর ভেতর থাকা ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে যায় এবং এগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

আর এটি আঘাত হানার পর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে। এছাড়া বিস্ফোরণে ব্যর্থ হওয়া বোমাগুলোও কয়েক দশক ধরে বিপদ জারি রাখে। মূলত বেসামরিক মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে এ বোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার মস্কো আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। একইসঙ্গে মার্কিন এই পদক্ষেপকে ওয়াশিংটনের ‘রুশ-বিরোধী’ কর্মকাণ্ডের আরেকটি ‘গুরুতর’ উদাহরণ হিসাবেও বর্ণনা করেছে দেশটি।

তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ দাবি করছেন, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী শহরাঞ্চলে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করবে না এবং এসব বোমা শুধুমাত্র ‘শত্রু বাহিনীর প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করতে’ ব্যবহার করা হবে।

রয়টার্স বলছে, ক্লাস্টার বোমা সংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি রাশিয়া, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ওই কনভেনশনে এই ধরনের অস্ত্র উৎপাদন, মজুদ, ব্যবহার এবং স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী স্পেন বলেছে, তারা ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোবেলস শনিবার মাদ্রিদে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনের সাথে বিদ্যমান দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে স্পেনেরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, কোনো পরিস্থিতিতেই (ক্লাস্টার বোমার মতো) কিছু অস্ত্র ও বোমা কিয়েভকে সরবরাহ করা যাবে না।’

ব্রিটেনও এই কনভেনশনের একটি স্বাক্ষরকারী দেশ যা ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং এসব বোমার ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন।

শনিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়ার বেআইনি ও বিনা উসকানিমূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য আমরা আমাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখব।’

টিএম