প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘স্বৈরশাসক’ হিসাবে আখ্যা দেওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেছে চীন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বেইজিং সফরের মাধ্যমে চিরবৈরী এই দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টার মাঝে বুধবার বাইডেনের ওই মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘উস্কানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছে চীন।

আনুষ্ঠানিকভাবে চীন-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের পর বর্তমানে তা একেবারে তলানিতে রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক এই সম্পর্ক স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের দুদিনের বেইজিং সফর শেষ হয়েছে সোমবার। 

বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ায় তহবিল সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাইডেন বলেছেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে সন্দেহজনক চীনা গুপ্তচর বেলুন শনাক্ত হওয়ার পর অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন শি জিনপিং।

এই বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘শি জিনপিং অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন। কারণ আমি গুপ্তচর সরঞ্জামে ভরা সেই বেলুনটিকে দুটি বক্স গাড়ি দিয়ে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করেছিলাম। আর সেসময় তিনি জানতেন না, বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে আছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘স্বৈরশাসকদের জন্য এটা বেশ বিব্রতকর। তারা জানেন না কী ঘটছে। বেলুনটিকে যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানে সেটির যাওয়ার কথা ছিল না।’

গত বছরের অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং গত মার্চে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠেছেন শি জিনপিং।

বাইডেন আরও বলেছেন, চীনের প্রকৃত অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বাইডেনের মন্তব্যকে ‘চরম অযৌক্তিক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

বাইডেনের মন্তব্যে তীব্র অসন্তুষ্টি জানিয়ে চীনা এই কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেনের মন্তব্য প্রকৃত ঘটনা, কূটনৈতিক প্রোটোকল এবং চীনের রাজনৈতিক মর্যাদার গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। এটা প্রকাশ্য রাজনৈতিক উসকানি।

সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেছেন, ‘বাইডেনের বড় মুখটি একটি আলগা কামান।’

তিনি বলেন, পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপরই চীন জোর দিয়েছে। কিন্তু বাইডেনের এমন মন্তব্য অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক এবং ক্ষতিকর। ব্লিনকেন চীন সফরে যা অর্জন করেছিলেন, বাইডেনের মন্তব্য তা সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারে।

সোমবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্থিতিশীল করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন  ব্লিনকেন ও শি জিনপিং। যাতে তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংঘাতের দিকে না যায় সেদিকে জোর দিয়েছিলেন তারা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা হিসাবে অ্যান্টনি ব্লিনকেনের প্রথম চীন সফরে বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি দৃশ্যমান না হলেও উভয়পক্ষই আগামীতে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। এমনকি মঙ্গলবার জো বাইডেনও বলেছিলেন, মার্কিন জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি শিগগিরই চীন সফরে যেতে পারেন।

কিন্তু তার একদিন পরই শি জিনপিংকে স্বৈরাচারী আখ্যা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: রয়টার্স, এপি।

এসএস