অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘বসতি স্থাপনের সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ’ করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

একইসঙ্গে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ এগিয়ে নেওয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘উত্তেজনা ও সহিংসতা’ সৃষ্টির কারণ এবং একইসঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে প্রধান বাধা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালালে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আর এরপরই জাতিসংঘের প্রধানের এই মন্তব্য সামনে এলো।

আল জাজিরা বলছে, সোমবারের এই সংঘর্ষের সময় ইসরায়েল হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠায় এবং সেটি দিয়ে জেনিন ক্যাম্পের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রকেট নিক্ষেপ করা হয়। গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটল।

এছাড়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ছোট অস্ত্র এবং বিস্ফোরক ডিভাইস নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লড়াই অব্যাহত রাখে। তাদের প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সামরিক যান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং ইহুদি ভূখণ্ডটির সৈন্যরা ভেতরে আটকে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আটজন ইসরায়েলি সেনাও আহত হয়েছে।

পরে সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এই ধরনের অবৈধ বসতি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।’

ফারহান হক বলেন, ‘এই অবৈধ বসতিগুলোর সম্প্রসারণ ভূখণ্ডটিতে উত্তেজনা ও সহিংসতার সৃষ্টি করছে এবং মানবিক সংকটকে আরও গভীর করছে।’

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে আরও বৃদ্ধি করছে, ফিলিস্তিনি ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করা, ফিলিস্তিনি জনগণের অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়া এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্বের বৈধ অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে।’

ফারহান হক বলেন, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন পরিকল্পনার পদ্ধতি সংশোধন করার সিদ্ধান্তে আন্তোনিও গুতেরেস ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। কারণ এটি পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাকে আরও দ্রুত এগিয়ে নেবে।

মূলত ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে আবারও নতুন করে হাজার হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করতে চলেছে ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে গত রোববার নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদনও দিয়েছে ভূখণ্ডটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি জোট সরকার।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি জোট সরকার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে হাজার হাজার নতুন আবাসন ইউনিটের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে এবং গত ২৭ বছর ধরে মেনে চলা নানা পদক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ ত্বরান্বিত করার জন্য অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমতাও দিয়েছে।

এতে করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি আবাসন ইউনিট নির্মাণ করতে পারবে ইসরায়েল।

এদিকে এই পদেক্ষেপের মাধ্যমে পুরো পশ্চিম তীর শিগগিরই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি দলগুলো। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বসতি স্থাপন কার্যক্রম অনুমোদন করা ‘পশ্চিম তীরের দখল কার্যক্রমকে পরিপূর্ণ করার কাজ বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেবে’।

এদিকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার শাসন ক্ষমতায় থাকা হামাস বলেছে, এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। অন্যদিকে ফাতাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকা থেকে বসতি স্থাপনকারীদের যেভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠিক সেভাবেই পশ্চিম তীর থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে’।

টিএম