বাংলাদেশি দেড় হাজার সেনাসহ সব শান্তিরক্ষীকে সরাতে বলল মালি
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আফ্রিকার দেশ মালিতে অবস্থান করছেন ১৫ হাজারেরও বেশি সেনা। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় দেড় হাজার সদস্য।
তবে শান্তিরক্ষার দায়িত্বে থাকা সব শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে মালির সামরিক সরকার।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
দেশটি বলেছে, শান্তিরক্ষীদের ‘শান্তি রক্ষার’ যে কাজে মোতায়েন করা হয়েছিল সেটি ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। ফলে ‘কোনো বিলম্ব ছাড়া’ তাদের মালি ছাড়তে হবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লায়ে দিপো বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের এখন চলে যেতে হবে।
এ বৈঠকের পর মালিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশনের প্রধান এল ঘাসিম ওয়েন বলেছেন, মালির সম্মতি ছাড়া সেখানে তাদের শান্তিরক্ষা মিশন চালানো এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক ক্রিস্টেন স্যালুমি বলেছেন, জাতিসংঘের মিশনের মেয়াদ এই মাসেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মালি আর এটির মেয়াদ বাড়াতে চায় না।
তিনি বলেছেন, ‘মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, জাতিসংঘ ১০ বছর ধরে তাদের দেশে অবস্থান করছে। আর যে সহিংসতা বন্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে জাতিসংঘ সেনা পাঠিয়েছিল; সেই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।’
মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে আরও জানিয়েছেন, ‘দেশটির সাধারণ মানুষ শান্তিরক্ষীদের আর বিশ্বাস করেন না। তারাই এখন শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নিতে আন্দোলন করছেন।’
আগামী ৩০ জুন মালি মিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটির মেয়াদ বাড়াতে— জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অন্তত ৯টি দেশকে সম্মতি দিতে হবে। এছাড়া পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের কোনো দেশই ভেটো দিতে পারবে না।
মালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি সেনা ও পুলিশের সংখ্যা
মালিতে (এমআইএনইউএসএমএ) নামের এ মিশনে যে ১৫ হাজার শান্তিরক্ষী রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেনা রয়েছে চাদের। আর দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালিতে অবস্থান করছিলেন চাদের ১ হাজার ৪২৭ সেনা। আর বাংলাদেশের সেনা ছিলেন ১ হাজার ৩৯৬ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮১ জন সেনা আছে মিসরের।
সেনাসদস্য ছাড়াও মালিতে বাংলাদেশের ২৮৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
২০১৩ সালে সশস্ত্র দল তুরেগের উত্থান ঠেকাতে ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে মালিতে মিশন শুরু করে জাতিসংঘ।
ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে সশস্ত্র দল তুরেগ মালির উত্তরাঞ্চলের শহরগুলো থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এ দলটি মরুভূমিতে পুনর্গঠিত হয়ে মালির সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করে।
নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকায় দেশটিতে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দুটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির বর্তমান সরকার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী, ফ্রান্সের সেনা ও এর মিত্রদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি তৈরি করেছে তারা।
মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের কারণে তাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন
এমটিআই