সাগর পাড়ি দিচ্ছে অভিবাসী বোঝাই একটি নৌকা- ফাইল ছবি

ইউরোপের দেশ গ্রিসে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় এখনো কয়েকশ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল বুধবার ভূমধ্যসাগরীয় পেলোনপলিস উপকূলের কাছে অভিবাসীদের বহনকারী বিশালাকৃতির একটি নৌকা ডুবে যায়।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে।

তবে বেঁচে ফেরারা জানিয়েছেন, নৌকাটিতে পাঁচশরও বেশি মানুষ ছিলেন। এ ঘটনার একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গ্রিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় অভিবাসী নৌ দুর্ঘটনা। নৌকাডুবির পর দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

গ্রিসের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তাদের সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর নৌকাটি দক্ষিণ-পশ্চিম পায়লোসের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে চলে যায়।

গত মঙ্গলবার নৌকাটিকে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায় দেখতে পায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত বিষয়ক সংস্থা ফ্রন্টেক্সের একটি বিমান— ওই সময় নৌকায় কাউকেই লাইফ জ্যাকেট পরতে দেখা যায়নি।

ওই সময় গ্রিসের কোস্টগার্ড স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নৌকাটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং সহায়তার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নৌকা থেকে অভিবাসীরা বার্তা পাঠান, ‘তারা ইতালি ছাড়া আর কোথাও যাবেন না।’

এর কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার গ্রিক কোস্টগার্ডের কাছে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়—  এতে জানানো হয় নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে।

এর কিছুক্ষণ পরই নৌকাটি কাত হয়ে যায় এবং ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পুরোপুরি ডুবে যায়। এরপর সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো শুরু হলেও ঝড়ো বাতাসের কারণে তা ব্যহত হয়।

তবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সহায়তাকারী সংস্থা অ্যালার্ম ফোন জানিয়েছে, নৌকাটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই গ্রিক কোস্ট গার্ড এটির দুরাবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় সাহায্য পাঠায়নি।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, নৌকায় যারা ছিলেন তারা গ্রিসে যেতে চাননি কারণ তাদের মনে হয়ত ভয় ঢুকেছিল— গ্রিসে গেলে নির্যাতন, এমনকি তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

অভিবাসীদের বহনকারী এ নৌকাটি লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাচ্ছিল। যারা নৌকাটিতে ছিলেন তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২০ বছর বা তার আশপাশে।

গ্রিসের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই নৌকাটি ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ নিয়ে কয়েকদিন ধরে সাগরে চলছিল।

গত মঙ্গলবার নৌকাটির কাছে যায় মাল্টার পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজটি নৌকার যাত্রীদের খাবার ও পানি দিয়ে গিয়েছিল।

গ্রিসের প্রেসিডেন্ট ক্যাটরিনা সাকেল্লাপোরোলো দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

এদিকে নৌকাতে থাকা অভিবাসীদের জাতীয়তা এখনো প্রকাশ করেনি গ্রিক কর্তৃপক্ষ। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নৌযানটির বেশিরভাগ যাত্রীই ছিলেন মিসর, সিরিয়া এবং পাকিস্তানের।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই