আরব সাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’র প্রভাবে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট এবং পাকিস্তানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিন্ধের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ও গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি ঘটবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) গুজরাট শাখা।

বর্তমানে আরব সাগরের উপকূলে অবস্থিত গুজরাটের জাখাউ বন্দর থেকে মাত্র ২৮০ কিলোমিটার দূরে আছে ‘বিপর্যয়’। ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পরবে গুজরাটের উপকূলে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমডির গুজরাট শাখার পরিচালক মনোরমা মোহান্তি সাংবাদিকদের বলেন, ’আমাদের পূর্বাভাস বলছে, ১৫ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে ৮টার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি গুজরাটের কুচ-সৌরাষ্ট্র উপকূল, পাকিস্তানের মান্দভি ও করাচির মধ্যবর্তী উপকূল এবং জাখাউ বন্দরে আঘাত হানবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার সাগর থেকে স্থলভাগে ‘বিপর্যয়’ আছড়ে পড়ার পর ব্যাপক বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাস-ঝড় ও বন্যা দেখা দেবে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে; সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং ঝড়ো বাতাসের উপকূলীয় গ্রামগুলোর কাঁচা ও আধপাকা সব ঘর ধ্বংস হয়ে যাবে।

এবং কেবল ভারতের গুজরাটেই নয়, পাকিস্তানের সিন্ধ রাজ্যের যেসব এলাকায় এই ঝড়র আঘাত হানবে— সেসবের সেখানকার পরিস্থিতিও একই রকম হবে বলে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আইএমডির গুজরাট শাখার পরিচালক।

 ‘এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারি, ‘বিপর্যয়’ অতি প্রবল বিধ্বংসী শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড় এবং স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর এটির প্রভাবে বিভিন্ন এলকায় প্রবল ঝড় ও নিম্নচাপ শুরু হবে।’

এর আগে এক সতর্কবার্তায় ভারত ও পাকিস্তানের আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন, গত কয়েক দিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকা ‘বিপর্যয়’ ভূমিতে আছড়ে পড়ার পর বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৫-১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। বাতাসের এই বিধ্বংসী গতির ফলে আরব সাগরে যে উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দেবে— তাতে আরব সাগর উপকূলের নিচু এলাকাগুলোতে ব্যাপক প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।

সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া এবং কাঁচা-আধপাকা ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়টির উপকূলীয় গ্রামগুলোর ক্ষেতের ফসল এবং গাছপালারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে মঙ্গলবার এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে আইএমডি কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

‘গুজরাটের উপকূলীয় ৮টি জেলার প্রতিটিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হবে এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও বাতাসের বেগ বাড়তে থাকবে। বৃহস্পতিবার থেকে এই বৃষ্টি রূপ নেবে ঢালাও মুষলধারা বর্ষণে। কোনো কোনো জেলায় এই দিন ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।’

বিদেশ থেকে ভারতে যে জ্বালানি তেলের চালান আসে, তার একটি বড় অংশ খালাস হয় গুজরাটের বিভিন্ন বন্দরে। ঝড়ের সতর্কতা হিসেবে ইতোমধ্যে বন্দরের কার্যক্রম ও বন্দরের সব তেল খালাস সম্পর্কিত সংস্থাগুলোর কার্যালয় বুধবার থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া মৎসজীবীদেরও আগামী শুক্রবার পর্যন্ত মাছ ধরতে সাগরে যেতে নিষেধ করেছে রাজ্য সরকার প্রশাসন।

‘আমরা এখন পর্যন্ত সম্ভব্য বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকা থেকে ৪৫ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আজ বুধবারও কুচ জেলায় আমাদের এই অভিযান চলছে,’ রয়টার্সকে বলেন গুজরাট রাজ্য প্রশাসনের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা কমল দায়ানি।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানও। বুধবার পর্যন্ত সিন্ধের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর। উপকূলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মিলনায়তন ও সরকারি ভবনগুলোকে আপতত আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

জলোচ্ছাসের তোড়ে যেন সাগরে ভাসমান জাহাজ ও অন্যান্য জলযানগুলো ভূমিতে আসতে না পারে সেজন্য করাচির বন্দর ও উপকূলের জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলো। এছাড়া হাসপাতালগুলোকেও এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।  

এসএমডব্লিউ