কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের টাম্বলার রিজে দাবানল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে

উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় চলমান দাবানল আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে নতুন ও তীব্রতর এই দাবানল কানাডাজুড়ে আরও হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে।

এদিকে কানাডার একজন প্রাদেশিক মন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, চলমান এই দাবানল ‘পুরো গ্রীষ্মজুড়ে’ চলতে পারে। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে রোববার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এবং তীব্রতর দাবানল কানাডাজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। অবশ্য উত্তর আমেরিকার এই দেশটি এসব দাবানল নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যত সংগ্রামও করে চলেছে। শনিবার দেশটির একজন প্রাদেশিক মন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, ‘দাবানল ‘পুরো গ্রীষ্মজুড়ে’ স্থায়ী হতে পারে।

এএফপি বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এই দাবানলে প্রায় ১৭ হাজার ৮০০ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গেছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন দাবানলে গড়ে যত অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতো, সর্বশেষ পরিসংখ্যান তার চেয়ে অনেক বেশি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর আমেরিকার এই দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, চলমান দাবানলে কানাডার পশ্চিমাঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকদিনের বিরামের পর দেশটির আলবার্টাতে আগুনের তীব্রতা বেড়েছে। সেখানে গত শুক্রবার রাতে এডসন শহর থেকে আরও মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত মে মাস থেকে এই শহরটির মানুষ দ্বিতীয়বার উচ্ছেদ প্রত্যক্ষ করল।

এডসন শহরটি যেখানে অবস্থিত সেই ইয়েলোহেড কাউন্টির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুক মার্সিয়ার বলেছেন, ‘আগুন এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে- কিছু বনকর্মীকে পিছু হটতে হয়েছে। তারা এই আগুনের সাথে লড়াই করতে পারছেন না।’

সম্প্রচারকারী সিবিসি’র সাথে কথা বলার সময় সেখানকার বাসিন্দা হেইলি ওয়েটস বলেছেন, ‘বিশাল কাফেলার’ আকারে পলায়তরত লোকদের একটি দলকে এডসন শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘মানুষ আতঙ্কিত হয়ে কেবল পালিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবছে। কিন্তু গাড়িতে ওঠার পর অনেকেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন: ‘যখন আমি ফিরে আসব তখন যদি আমার বাড়িটি আর না থাকে?’

এদিকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে টাম্বলার রিজ শহরের কয়েক মাইলের মধ্যে দাবানল পৌঁছে গেছে। আর এই কারণে ২৪০০ জনসংখ্যার এই শহরটির বেশিরভাগই খালি করা হয়েছে।

এছাড়া কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় কুইবেকের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বোননারডেল স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বলেছেন, প্রদেশের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশ কঠিন। সেখানে বেশ কয়েকটি শহর হুমকির মুখে রয়েছে।

তবে উত্তর-পূর্ব কুইবেকের দাবানলকে ‘স্থিতিশীল’ হিসাবে মনে করা হচ্ছে।

জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বোননারডেল আরও বলেন, ‘কুইবেকের ইতিহাসে এবারই প্রথম এতগুলো দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে, এত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা কার্যত একটি যুদ্ধ করতে যাচ্ছি যা পুরো গ্রীষ্মজুড়ে চলবে আমরা মনে করি।’

এএফপি বলছে, কুইবেক প্রদেশের প্রায় ১৪ হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বোননারডেল ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা এখনও এই যুদ্ধে জয়ী হইনি।’

কানাডার পরিবেশ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে দেশটিতে ৪১৬টি সক্রিয় দাবানলের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে ২০৩টিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

টিএম