ট্রেন-ব্রিজ-টাওয়ার থেকে শুরু করে রাস্তা, আজব সব চুরির ঘটনা বিহারে

শিঙাড়ায় যত দিন আলু থাকবে, বিহারে তত দিন লালু থাকবেন— বলেছিলেন ভারতের বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। ভবিষ্যদ্বাণীটি মেলেনি। বিহারে লালুরাজ সাঙ্গ হয়ে নীতীশরাজ শুরু হয়েছে। আর নিন্দুকেরা এখন বলছেন, লালু বা নীতীশকুমার নয়, বিহারের মসনদে যিনিই থাকুন, বিহার বিহারেই থাকবে। সঙ্গে থাকবে এমন কিছু ঘটনা যা শুধুমাত্র বিহারেই ঘটা সম্ভব।

গত রোববারের ঘটনার পর নতুন করে এই বোধ জেগেছে বিহারের মানুষের মনে। রোববার বিহারের একটি নির্মাণাধীন সেতু ধসে পড়ে। প্রায় তৈরি হয়ে যাওয়া একটি সেতু তাসের ঘরের মতো ভেঙে নদীগর্ভে মিলিয়ে যেতে জনগণের মনে দুটি প্রশ্ন উঠেছে—  সেতুটি যদি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতো তা হলে কী পরিণতি হতো! আর দ্বিতীয়টি হলো, দুটি কংক্রিটের পিলার ও অজস্র ধাতব তারের ভরে ঝুলে থাকা সেতুটি কী দিয়ে তৈরি হয়েছিল যে কাজ শেষ না হতেই এভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।

বিস্ময় অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিহারের ভাগলপুরের এই সেতুটি এই প্রথমবার নয়, আগেও একবার ভেঙেছে। অথচ এই সেতু নাকি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের স্বপ্নের প্রকল্প। ১ হাজার ৭৫০ কোটি ভারতীয় রুপি খরচ করা হয়েছে সেতুটি বানানোর জন্য।

বিজেপির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে রয়েছে যেখানে, সেখান থেকেও টাকা সরাতে বাধছে না। এ থেকেই বোঝা যায় বিহারে দুর্নীতি কোন স্তরে পৌঁছেছে।

নীতীশের এই স্বপ্নের প্রকল্পে এখন বিহারের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ভাগলপুরের ওই সেতুর নতুন নামকরণও করেছেন নেটিজেনরা। কেউ নাম দিয়েছেন ‘দুর্নীতির সেতু’। কেউ সম্বোধন করেছেন ‘চোরের সেতু’ বলে। সমালোচনায় মুখর হয়েছে দেশ। আর এই ঘটনাই নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে বিহারে হওয়া এমনই আরও অনেক অদ্ভুত ‘চুরি’র কথা।

উদ্বোধনের আগেই ভাঙল সেতু

গেল ডিসেম্বরেই আরও একটি সেতু ভেঙে পড়েছিল বিহারে। বেগুসরাইয়ের বুড়ি গন্ডক নদীর উপর সেই সেতুটি সদ্য তৈরি করা হয়েছিল। দিন কয়েক পরেই উদ্বোধন হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু তত দিন পর্যন্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি ওই সেতু।

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের নাবার্ড প্রকল্পে তৈরি ওই সেতুটি বানাতে খরচ হয়েছিল ১৩ কোটি টাকা। ২০৬ মিটার দীর্ঘ ওই সেতু চালু হয়ে যাওয়ার পর ভাঙলে বড় বিপর্যয় হতে পারত। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণও হারাতে পারতেন বহু বিহারবাসী।

রাস্তা চুরি

সাতসকালে উঠে দেখলেন, বাড়ির সামনে বড় রাস্তাটি উধাও। প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা পাশাপাশি দু’টি গ্রামকে জুড়ত। কিন্তু রাস্তার চিহ্নমাত্র নেই সেখানে। তার জায়গা নিয়েছে এক বিস্তৃত কৃষিক্ষেত্র।

বিহারের বাঁকা জেলার রাজৌরি ব্লকের বাসিন্দারা চমকে গিয়েছিলেন দেখে। রাতারাতি দু’কিলোমিটার রাস্তা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনো শোনননি তাঁরা। অনেক পরে জানা যায় রাস্তা ‘চুরি’ করেছে একদল দুষ্কৃতী। ওই রাস্তার জায়গায় কৃষিক্ষেত্র বানিয়ে তাতে শস্যের বীজও বুনে দিয়ে গিয়েছিল তারা।

মোবাইল টাওয়ার চুরি

একটা আস্ত মোবাইল টাওয়ারও চুরি গিয়েছিল বিহারে। মুজফ্ফরনগরে ঘটেছিল ঘটনাটি। এক রাতের মধ্যেই চোরেরা এলাকা থেকে গায়েব করে দিয়েছিল টাওয়ারটিকে। কিন্তু কীভাবে মোবাইলের টাওয়ার চুরি করা হলো, তা ভেবেই পাচ্ছিলেন না এলাকার বাসিন্দারা।

পরে পুলিশ জানায়, টাওয়ারের ছোট ছোট অংশ খুলে সেগুলো পিকআপ ভ্যানে ভরে নিয়েছিল চোরেরা। প্রায় চার লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ছিল তাতে। মোবাইল টাওয়ারের পাশাপাশি একটি জেনারেটর সেট, শেল্টার আর স্টেবিলাইজারও নিয়ে গিয়েছিল চোরেরা। 

লোহার সেতু চুরি

একটা আস্ত সেতুও চুরি করেছিল বিহারের চোরেরা। ৬০ ফুট দীর্ঘ লোহার তৈরি একটি ব্রিজ বেমালুম হাওয়া হয়ে গিয়েছিল এলাকা থেকে। সেই চুরি আবার হয়েছিল দিনের আলোয়।

নিজেদের সরকারি সেচ দফতরের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে লোহার সেতুটিকে এলাকাবাসীর চোখের সামনে দিয়ে খুলে নিয়ে যায় চোরেরা। সরকার এই চুরির ব্যাপারটি বুঝে ওঠার আগেই সেতু নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় চোরেরা।

রেললাইন চুরি

দুই কিলোমিটার রেললাইনও বিক্রি করে দিয়েছিল চোরেরা। এটিও বিহারেরই ঘটনা। সমস্তিপুরের ওই রেললাইন আবর্জনা হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ফেলে দেওয়া লোহালক্কর কেনা ব্যবসয়ায়ীদের কাছে। এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি বিহারে।

ট্রেন চুরি

বিহারে একটি ট্রেনের ইঞ্জিনও চুরি করে নিয়েছিল চোরেরা। ডিজেলচালিত সেই ইঞ্জিন মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল বারাউনিতে। সেখান থেকেই চোরেদের একটি দল ইঞ্জিন নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

রোববারের সেতু ভাঙার ঘটনা এই আজগুবি চুরির তালিকা আরও একটু দীর্ঘায়িত করল। ভাগলপুরে ভেঙে পড়া ব্রিজটি চার লেন বিশিষ্ট সেতু ছিল। সেতুটি ভেঙে পড়ার ঘটনায় এক বাসিন্দা টুইটারে মজা করে লিখেছেন, ভেবেছিলাম, পরের বার ভোটটা নীতীশকেই দেব। কিন্তু ব্রিজের সঙ্গে সঙ্গে মনও ভেঙে দিলেন উনি।

ওএফ