মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে গত তিন বছরের মধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিরোধী আইনপ্রণেতারা জয় পেলেন।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে মঙ্গলবার দেশটিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কুয়েতে মন্ত্রিসভার সঙ্গে সংসদের অচলাবস্থা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। যা বিভিন্ন সময়ে দেশটির সরকারের রদবদল এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। এতে দেশটির বিনিয়োগ ও সংস্কার কাজ ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়।

কুয়েতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কুনা বলছে, দেশটির নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের বেশিরভাগই গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। বুধবার ঘোষিত নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, কুয়েতের বিরোধী রাজনীতিকরা আইনসভার ৫০টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে জয়ী হয়েছেন এবং গত নির্বাচনে জয়ী ৩৭ জন আইনপ্রণেতা এবারও তাদের আসন ধরে রেখেছেন।

রাজধানী কুয়েত সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি রম ম্যাথেসন বলেছেন, নির্বাচনী এই ফলের মূল অর্থ হলো কুয়েতের রাজনীতি এখনও অচলাবস্থায় রয়েছে এবং সংকট সমাধানের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

মঙ্গলবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। মাত্র ৫১ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির এই নিম্নহার দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে কুয়েতিদের মাঝে যে অসন্তোষ রয়েছে, সেটিই তুলে ধরছে।

গত মার্চে কুয়েতের সাংবিধানিক আদালত ২০২২ সালের ভোটের ফলাফল বাতিল করার পর এই নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

কুয়েতে রাজনৈতিক দলের অনুমতি না থাকলেও দেশটির সংসদের ক্ষমতা অন্যান্য উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির সংসদের আইন পাস ও আটকে দেওয়ার ক্ষমতা, মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ডাক দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে ৫০টি আসনের জন্য মোট ২০৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন; যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসাবে জয় পেয়েছেন জিনান বোশেহরি। ২০২২ সালের ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্টেও বিরোধী প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।

দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মারজুক আল-ঘানিমও পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কুয়েতের বর্তমান আমিরের ছেলে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমাদ আল-নওয়াফ আল-আহমাদ আল-সাবাহর কট্টর সমালোচক হিসাবে পরিচিতি আছে দেশটির ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী প্রভাবশালী এই রাজনীতিকের।

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কুয়েতের আয়তন মাত্র ১৭ হাজার ৮১৪ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৪২ লাখের কিছু বেশি। ১৯৬২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে কুয়েতে নির্বাচনভিত্তিক পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা চালু হয়।

কুয়েতের পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৭৬টি। এসব আসনের মধ্যে ৫০টি নির্বাচিত এমপিদের জন্য, বাকি ১৬টি আসনের এমপিরা নিয়োগ পান আমিরের সুপারিশে।

সূত্র: আল জাজিরা।

এসএস