গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হওয়া শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে। এরই অংশ হিসাবে আগামী ১৫ জুন থেকে প্রয়োজনীয় প্রায় ৬০ শতাংশ ওষুধের দাম ১৬ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার দেশটির অর্থমন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা ওষুধের দাম কমানোর সরকারি এই সিদ্ধান্তের তথ্য জানিয়েছেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির দাম ব্যাপক বৃদ্ধির জেরে গত বছর ভারতের দক্ষিণ উপকূলের এই দ্বীপ দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। এর ফলে বিক্ষোভকারী জনতা দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বেল আউট পাওয়ায় গত নয় মাসে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের উন্নতি হয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে মুল্যস্ফীতি বাড়লেও বর্তমানে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা বলেছেন, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার রুপির মান প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সরকার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ৬০টি ওষুধের দাম কমানোর সুযোগ পেয়েছে।

সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভা ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চরম সংকটের সময় আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছিল। কোনো বিকল্প ছিল না। কিছু ওষুধের দাম ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওষুধের ঘাটতি ছিল। তবে এখন মুদ্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে আমরা সেই সুবিধাটুকুই ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’

শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় গত এপ্রিলে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ থাকলেও মে মাসে তা কমে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। তবে গত মাসে দেশটির সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল; স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমে এলেও এই মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।

দেশটির অর্থমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুদ্রার মানের শক্তিশালী অবস্থানের ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহেই ৩০০ থেকে ৪০০ পণ্যের আমদানি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। যদিও এই বিষয়ে বিবৃতিতে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে দেশটির সরকার যানবাহন, প্রসাধনী পণ্য ও মদ্যপানীয়সহ বিভিন্ন ধরনের বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। তবে গত বছর থেকে এসব বিধিনিষেধ ধারাবাহিকভাবে শিথিল করছে সরকার।

গত বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হলেও চলতি বছরে তা ৩ শতাংশ হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে আইএমএফ।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস