গোপন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারতসহ বিশ্বের গোয়েন্দা প্রধানরা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে গোপন আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বহু দেশের গোয়েন্দা প্রধান। দেশটিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগের ফাঁকে এই গোপন বৈঠক করেন তারা।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন ও ভারতের গোয়েন্দা প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি সম্পের্কে জানেন এমন বেশ কয়েকজনের বরাত দিয়ে রোববার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় দুই ডজন প্রধান প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সপ্তাহান্তে সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগের ফাঁকে গোপন বৈঠক করেছেন বলে পাঁচজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, এই ধরনের সভা সিঙ্গাপুর সরকার আয়োজন করে থাকে এবং বেশ কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তা সম্মেলনের পাশাপাশি একটি পৃথক ভেন্যুতে বিচক্ষণতার সাথে এটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বলে তারা জানিয়েছে। যদিও এই ধরনের গোপন বৈঠকের কথা এর আগে কখনও জানা যায়নি।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গোপন এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস। তিনি তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান। এছাড়া বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশের মধ্যে চীনও উপস্থিত ছিল। যদিও বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা বিদ্যমান রয়েছে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর প্রধান সামন্ত গোয়েলও গোপন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে ভারতীয় একটি সূত্র জানিয়েছে।
গোয়েন্দা প্রধানদের এই গোপন বৈঠক সম্পর্কে জানেন এমন একজন ব্যক্তি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্যাডো এজেন্ডায় এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পরিসরের পরিপ্রেক্ষিতে এটি কোনও উৎসব ছিল না, বরং একে অপরের উদ্দেশ্য এবং প্রধান প্রধান বিষয়গুলো গভীরভাবে বোঝার জন্য এটি ছিল একটি উপায়।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘গোয়েন্দা পরিষেবাগুলোর মধ্যে একটি অব্যক্ত কোড রয়েছে যে, যখন কোনও আনুষ্ঠানিক এবং উন্মুক্ত কূটনৈতিক কাজ কঠিন হয়ে যায় তখন তারা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করা বা কথা বলতে পারে। যেকোনও উত্তেজনার সময়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সিঙ্গাপুরের এই নিরাপত্তা সম্মেলন এটিকেই এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।’
এদিকে বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে গোপন বৈঠক সম্পর্কে আলোচনা করা ওই পাঁচটি সূত্রই নিজেদের পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শাংরি-লা ডায়ালগে অংশ নেওয়ার সময়, ‘গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ অংশগ্রহণকারীরাও তাদের অন্যদেশের সমান মর্যাদার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ নেয়।’
ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠক করার বিষয়ে কিছু সুবিধাও করে দিতে পারে। নিরাপত্তা (সংলাপের) সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত এই ধরনের সভাগুলোকে অংশগ্রহণকারীরাও উপকারী বলে মনে করেছেন।’
সিঙ্গাপুরে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের কাছে বৈঠকের বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। এছাড়া এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও চীনা এবং ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বিস্তৃত পরিসরের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য ফাইভ আইস নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে রয়েছে এবং এসব দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘন ঘন নিজেদের মধ্যে দেখা করে থাকেন।
এছাড়া বড় পরিসরে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এই ধরনের বৈঠক খুবই বিরল এবং তেমন বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় কখনোই তা প্রচার করা হয় না।
সিঙ্গাপুরে গোয়েন্দা প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই বৈঠকে হওয়া সুনির্দিষ্ট কিছু আলোচনার বিষয়ে কিছু বিশদ বিবরণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবারের ওই আলোচনায় ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং আন্তঃজাতিক অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে আলোচনা সম্পর্কে জানেন এক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা প্রধানরা অনানুষ্ঠানিক ভাবে জড়ো হন এবং বৈঠক করেন বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে গোপন এই বৈঠকে কোনও রুশ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভলোদিমির ভি. হ্যাভরিলভ শাংরি-লা ডায়ালগ নামে পরিচিত এই নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিলেও তিনি গোয়েন্দা বৈঠকে যোগ দেননি বলে জানা গেছে।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের সুরটি ছিল সহযোগিতামূলক। দ্বন্দ্বমূলক নয়।
বড় পরিসরের এই নিরাপত্তা সংলাপে ৪৯টি দেশের ৬০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি তিন দিনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পাশাপাশি শাংরি-লা হোটেলে রুদ্ধদ্বার দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বৈঠক করেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু এবং ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ মূল বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া জাপান, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াও এই সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোববার এই সম্মেলনে ভাষণ দেন।
টিএম