ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ২৮৮ জনের মরদেহ এবং অন্তত ৯০০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ওড়িশা রাজ্যের ফায়ার সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু সারেঙ্গি বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজ্য প্রশাসনের মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা এএফপিকে বলেছেন, হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে ঘটনাস্থলে সক্রিয় আছে ২ শ’রও বেশি অ্যাম্বুলেন্স।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় ঘটে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা। শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালবাহী ট্রেন— এই তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল— সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি এখনও। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিগন্যালে অপেক্ষমান মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল এবং সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস আগেই ওই এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছিল। সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুতির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না— তা এখনও বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে যত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে গতকাল শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি ছিল অন্যতম ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী।
কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাইনচ্যুত হয় এবং ট্রেনের কয়েকটি বগি বিপরীত লাইনে আড়াআড়িভাবে পড়ে যায়। কাছাকাছি সময়েই বিপরীত লাইন ধরে হাওড়া থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ওই সময় সেখানে পৌঁছায় এবং লাইনের ওপর পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে সেটিও লাইনচ্যুত হয়।
গোটা ঘটনায় মালবাহী ট্রেনটির ভূমিকা কী ছিল— জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর মালগাড়ির ওপর উঠে গিয়েছিল করমণ্ডলের ইঞ্জিন।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যাপক একটা ধাক্কা অনুভূত হলো এবং অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ আমার ওপর এসে পড়ল। আমি ছিলাম তাদের সবার নিচে।’
‘আমি হাতে, পিঠে, ঘাড়ে ব্যাথা নিয়ে যখন কোনো রকমে বাইরে বের হতে পারলাম— দেখলাম কেউ ইতোমধ্যে তার হাত হারিছেন, কেউ পা, কারো বা চেহারা সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
ইতোমধ্যে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক হতাহতদের জন্য শনিবার রাজ্যে এক দিন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাটি হয়েছিল ১৯৮১ সালে। ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়ে বিহারের একটি যাত্রীবাহী ট্রেন নদীতে পড়ে গিয়েছিল সেবার। ওই দুর্ঘটনায় ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
এসএমডব্লিউ