বাখমুতের যুদ্ধে প্রাণ গেছে ২০ হাজার ওয়াগনার যোদ্ধার
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর পুরোপুরি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এই কাজে অগ্রভাগে ছিল রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহর দখলে নিতে টানা কয়েক মাসব্যাপী যুদ্ধ হয়েছে এবং এতে ওয়াগনারের প্রায় ২০ হাজার যোদ্ধা মারা গেছেন।
ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর নিয়ন্ত্রণের জন্য টানা কয়েক মাসব্যাপী হওয়া যুদ্ধে রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে ওয়াগনারের হয়ে লড়াই করার জন্য তিনি প্রায় ৫০ হাজার বন্দিকে নিয়োগ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে।
বুধবার নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কনস্ট্যান্টিন ডলগভকে বলেন, বাখমুত শহর দখলের এই লড়াইয়ে তার চুক্তিবদ্ধ সৈন্যদের মধ্যেও অনুরূপ সংখ্যক সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
এই সপ্তাহান্তে ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বাখমুতে তাদের বিজয় হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন, তার সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত শহরের অভ্যন্তরে সর্বশেষ এলাকা থেকে ইউক্রেনীয়দের সরিয়ে দিয়েছে। পরে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই দাবি সামনে আনে।
সোভিয়েত আমলে বাখমুতের নাম ছিল আর্টিওমভস্ক। বাখমুতের দখল নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ওয়াগনার অ্যাসল্ট ইউনিটের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ফলে এবং আর্টিলারি ও সাউদার্ন গ্রুপ অব ফোর্সের বিমান হামলার মাধ্যমে আর্টিওমভস্ককে মুক্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
এছাড়া বাখমুত দখলে নিয়োজিত সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
তবে ইউক্রেনের সামরিক সূত্র দাবি করেছে, শহরের উপকণ্ঠে কয়েকটি ভবনের নিয়ন্ত্রণ এখনও তাদের হাতে রয়েছে। এমনকি ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
প্রিগোজিন একজন ব্যবসায়ী হলেও এক বছরেরও বেশি আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে তার প্রভাব গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং রুশ সামরিক বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে তাদের অযোগ্যতার জন্য অভিযুক্ত করে রুশ সামরিক নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনাও করেছেন তিনি।
আল জাজিরা বলছে, গত বছর ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার কারাগারগুলো পরিদর্শন করেছিলেন। সেসময় তিনি বন্দিদের ইউক্রেনে ওয়াগনারের হয়ে যুদ্ধ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। বিনিময়ে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষে তারা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে তারা মুক্তভাবে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ভাড়াটে এই নেতা বলেছেন, ইউক্রেন তার পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু বাখমুতকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করবে এবং ক্রিমিয়া আক্রমণ করবে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত, এই ধরনের দৃশ্য রাশিয়ার জন্য ভালো কিছু হবে না। তাই আমাদের কঠিন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’
টিএম