হরমুজ প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে ইউএসএস পল হ্যামিল্টনের দৃশ্য। গত শুক্রবারের ছবি

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালীসহ আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষায় ইরান যথেষ্ট শক্তিশালী বলে দাবি করেছে তেহরান। দেশটির দাবি, অন্যান্য আঞ্চলিক পক্ষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষা করতে সক্ষম ইরান।

কৌশলগত হরমুজ প্রণালীতে পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পরে দেশটি এই মন্তব্য করল। রোববার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ইরানের দক্ষিণ জলসীমার কাছে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে বিশ্বজুড়ে আট মাসের সফরের পরে ফিরে আসা দু’টি ইরানি যুদ্ধজাহাজকে স্বাগত জানানো হয়। আর সেখানেই ইরানের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য করা হয়।

এর দুই দিন আগে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নৌবাহিনীর কমান্ডাররা ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্য প্রদর্শনে এবং জলপথে চলাচলকারী জাহাজের নিরাপত্তার তদারকির জন্য ইউএসএস পল হ্যামিল্টনে হরমুজ প্রণালী সফর করেন। মূলত এই হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের এক পঞ্চমাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি বলেছেন, নিজেদের আঞ্চলিক জলসীমা থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে হরমুজ প্রণালীতে (পশ্চিমা দেশগুলোর কমান্ডাররা) কী করছে তা পশ্চিমা দেশগুলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাগেরি বলেন, ‘ইরান ও পারস্য উপসাগরের দক্ষিণের দেশগুলো পারস্য উপসাগর, হরমুজ প্রণালী এবং ওমান সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একে-অপরকে সহযোগিতা করতে সক্ষম।’

তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের শুরুতে ওমান সফরের সময় এই সমস্যা নিয়ে তিনি আলোচনাও করেছেন।

মোহাম্মদ বাগেরি বলেন, ‘আঞ্চলিক জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বিদেশিদের প্রয়োজন নেই। আমাদের আঞ্চলিক জলসীমা বর্তমানে আমাদের সেনাবাহিনীর নৌবাহিনী এবং ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস বাহিনীর হাতে সুরক্ষিত রয়েছে।’

আল জাজিরা বলছে, মার্কিন নৌবাহিনীর ৫ম নৌবহরের তত্ত্বাবধান করেন ভাইস অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার। হরমুজ প্রণালীর চারপাশে ভ্রমণের সময় তিনি বলেছিলেন, ইরান গত দুই বছরে আটটি জাহাজ জব্দ করেছে এবং আরও সাতটিতে আক্রমণ করেছে।

ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) ফাস্ট বোটগুলো ইউএসএস পল হ্যামিল্টনকে ১ কিমি (০.৫ নটিক্যাল মাইল) থেকেও কম দূরত্ব থেকে দেখছিল বলে জানা গেছে।

ইরান গত মাসে তার আঞ্চলিক জলসীমায় দু’টি তেলের ট্যাংকার আটক করেছে। দেশটি বলেছে, এর একটিকে বিচারিক আদেশ মেনে থামানো হয়েছিল এবং অন্যটি একটি ইরানি জাহাজকে আঘাত করার পরে এই অঞ্চল থেকে ‘পালিয়ে যাওয়ার’ চেষ্টা করার সময় ইরানি বন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরায় চালুর প্রচেষ্টা বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে এবং এর মধ্যেই ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যকার উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ট্যাংকার আটকের এই ঘটনাকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছে।

যে কারণে হরমুজ প্রণালী এতো গুরুত্বপূর্ণ
মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তেল রপ্তানি করা হয় হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়। হরমুজ প্রণালীর একদিকে আছে আরব দেশগুলো। এসব দেশের মধ্যে আমেরিকার মিত্র দেশগুলো রয়েছে। হরমুজ প্রণালীর অন্য পাশে রয়েছে ইরান।

হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অংশ সেখানে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল। এই প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের জন্য দু’টি লেন রয়েছে এবং প্রতিটি লেন দুই মাইল প্রশস্ত। হরমুজ প্রণালী সংকীর্ণ হতে পারে। কিন্তু জ্বালানি তেল বহনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ চলাচল করার জন্য হরমুজ প্রণালী যথেষ্ট গভীর এবং চওড়া।

পৃথিবীতে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল রপ্তানি হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়।

টিএম