ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসের দু’বার রূপ বদলানো ধরন শনাক্ত হয়েছে। মহারাষ্ট্রে ২০৬টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার এই ধরন শনাক্ত হয়েছে বলে বুধবার দেশটির সরকারি জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

দেশটির জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক সুজিত কুমার সিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাজধানী নয়াদিল্লিতেও ৯টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।

একই ভাইরাস থেকে এটির দু’বার রূপ বদল ঘটেছে কি না অথবা অতি-সংক্রামক নাকি কম; সেবিষয়ে জানতে ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা গবেষণা করছেন। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮টি রাজ্যের ১০ হাজার ৭৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৭৩৬টি নমুনায় যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ভাইরাসের ধরন মিলেছে। এছাড়া ৩৪টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন এবং একটিতে ব্রাজিলের ধরন শনাক্ত হয়েছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দেশটির ১০টি জাতীয় ল্যাবরেটরির গ্রুপ দ্য ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ কনসোর্টিয়াম অন জিনোমিকস (আইএনএসএসিওজি) ওই ১০ হাজার নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে।

দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে দু’বার রূপ বদলানো অথবা বিদেশে শনাক্ত হওয়া ধরনগুলো দায়ী কি না তা এখনও জানা যায়নি।

বুধবার ভারতে নতুন করে আরও ৪৭ হাজার ২৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ২৭৫ জন; যা এই ভাইরাসে চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃত্যু।

ভারতের ভাইরাসবিদ শহিদ জামিল বলেন, ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের নির্দিষ্ট এলাকায় দু’বার রূপ বদল ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে এবং মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে ভাইরাসটি। স্পাইক প্রোটিন হলো ভাইরাসের একটি অংশ; যা ব্যবহার করে ভাইরাসটি মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে।

দেশটির সরকার বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে— গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ভাইরাসটির ই৪৮৪কিউ এবং এল৪৫২আর ধরনটির রূপান্তরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ধরনের দ্বৈত রূপান্তর মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে এবং সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে পারে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে ভারতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ১৭ লাখের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার।

এক বছরের বেশি সময় ধরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হিমশিম খাওয়া ভারতের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আবারও প্রবল চাপের মুখোমুখি হয়েছে। চলতি মাসে দেশটিতে হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাত এই চাপের মুখোমুখি হয়। দেশটির কিছু কিছু রাজ্যে ইতোমধ্যে কারফিউ এবং অন্তর্বর্তীকালীন লকডাউনসহ কঠোর স্বাস্থ্য বিধি পুনরায় আরোপ করেছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসএস