পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর ‘চক্রান্ত’ দেশকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। এসময় তিনি ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ‘বৃহত্তম’ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তানিদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করেন।

এমনকি এই ধরনের চক্রান্ত পাকিস্তানকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

বুধবার লাহোরে নিজের জামান পার্কের বাসভবন থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দেওয়া বক্তৃতায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সংবিধানকে অপমান করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা বা এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বদনাম হয়েছে কিনা তা নিয়ে পিডিএম নেতারা এবং লন্ডনে পলাতক নওয়াজ শরিফের কোনও মাথাব্যথা নেই।’

পিটিআই প্রধান দাবি করেন, ‘আমি একটি ভীতিকর দুঃস্বপ্ন দেখছি; আর তা হলো- দেশ আসন্ন বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করার একমাত্র সমাধান হচ্ছে নির্বাচন। ইমরান খান অনুরোধ করেন, ‘আমি নির্বাচন হতে দেওয়া এবং দেশকে বাঁচানোর জন্য ক্ষমতাবানদের কাছে আবেদন করছি।’

তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারজুড়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলেছেন জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘আমি যখন সেনাবাহিনীকে তিরস্কার করি, তার মানে হচ্ছে আমি আমার বাচ্চাদের সমালোচনা করছি।’

ইমরান খান ক্ষমতায় গেলে সেনাপ্রধানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে কিছু রাজনীতিবিদ যেসব কথা বলছেন, সে বিষয়টি উল্লেখ করে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। সাবেক সেনাপ্রধান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও আমি কোনও হস্তক্ষেপ করিনি।’

জামান পার্কের বাসভবনে প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসী লুকিয়ে আছে বলে পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইমরান খান বলেন, সার্চ ওয়ারেন্ট পাওয়ার পর সরকারকে অবশ্যই আইনানুগ উপায়ে বাড়িটি তল্লাশি করতে হবে। কারণ সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি তার নিজের জীবনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

‘কিন্তু এটিকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পিটিআই-এর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করার অজুহাত বানাবেন না,’ বলে সতর্ক করেন তিনি।

পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে প্রদেশের কর্পস কমান্ডার হাউস এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ভবন রক্ষা না করার অভিযোগ করে ইমরান খান বলেন, তিনি প্রমাণ পেয়েছেন যে কিছু অজ্ঞাত সশস্ত্র ব্যক্তি পিটিআই সমাবেশে প্রবেশ করেছিল এবং উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে আক্রমণ চালিয়েছিল।

ইমরান খান  দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করার এখনই উপযুক্ত সময়। অন্যথায় পূর্ব পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে পাকিস্তান।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যা পিটিআই এবং বাকি ৩০ শতাংশ মানুষ পিডিএম জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর পাশে আছে বলে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে। এসময় তিনি ওই সমীক্ষার একটি গ্রাফিক চিত্রও ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন তিনি।

পরে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান এক টুইটে জানান: ‘সম্ভবত আমার পরবর্তী গ্রেপ্তারের আগে এটাই আমার শেষ টুইট। পুলিশ আমার বাড়ি ঘিরে রেখেছে।’

এসময় তিনি কিছু ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে তার বাড়ির বাইরে পুলিশ অবস্থান করছে বলে দেখা যাচ্ছে।

দ্য ডন বলছে, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ শেষে ইমরান খান তার জামান পার্কের বাসভবনে ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল মিডিয়া প্রতিনিধিদের প্রবেশের অনুমতি দেন এবং তাদের নিজেদেরই দেখতে দেন যে, জামান পার্কের ভেতরে কোনও সন্ত্রাসী নেই।

ইমরানের বাসভবনে পরিদর্শনকারী গণমাধ্যমকর্মীরা পরে জানান, বাড়িতে কেবল গৃহকর্মী এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য রয়েছে।

টিএম