ইমরান খান বললেন
‘একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছিল, তা একেবারে নৃশংস’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) সংঘটিত নৃশংসতা আমাদের বুঝতে হবে। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় জামিনে মুক্ত হওয়ার পর গত শনিবার জাতির উদ্দেশে ভার্চ্যুয়ালি দেওয়া ভাষণে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
পিটিআইয়ের এই প্রধান বলেন, ‘আজ, আমাদের বোঝা উচিত— পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটেছিল এবং কী ধরনের নৃশংসতা চালানো হয়েছিল। সেখানে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল এবং যার প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল, তাদের অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
বিজ্ঞাপন
‘আমরা দেশের অর্ধেক হারালাম। দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কারণ মানুষ রুদ্ধ দরজার আড়ালে সিদ্ধান্ত নেয়, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা জানে না বাকি বিশ্ব কীভাবে কাজ করছে, তারা সিদ্ধান্ত নেয়,’ বলেন খান।
পিটিআই প্রধান বলেন, ‘তাদের সিদ্ধান্তের কারণে লোকজনের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তারা সেবিষয়ে মানুষকে মূল্যায়নও করতে দেয় না। হামুদুর কমিশন রিপোর্ট লেখা হলেও সেটি তখন প্রকাশ করা হয়নি। বরং ২৫ বছর পরে সেই রিপোর্ট ভারতে প্রকাশ করা হয়েছিল। কাউন্টিগুলো এভাবে কাজ করে না।’
ইমরান খান বলেন, তিনি জনগণকে পূর্ব পাকিস্তানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চান। তিনি বলেন, এটা তার জীবদ্দশায় ঘটেছিল, ১৯৭১ সালের মার্চে।
তিনি বলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের যে জাহাজ এসেছিল, সেটি ছিল শেষ জাহাজ। আমার এখনও মনে আছে পাকিস্তানের (পশ্চিম) প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কী ধরনের ঘৃণা ছিল। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় আমরা কী ঘটছে সে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। একেবারে আজকের মতো। তবে পার্থক্য হল, আমাদের কাছে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আছে এবং তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও বন্ধ করে দিয়েছে।’
‘কারণ তারা নিজেদের ভাষ্য প্রচার করতে চায় যে, যারা প্রতিবাদ করছে তারা দাঙ্গাবাজ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা দেশের অর্থনীতির ক্ষতির কথা কল্পনাও করতে পারি না। পূর্ব পাকিস্তানেও ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। ওই দিন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা। এতে পাকিস্তানি হানাদারের বুলেটের আঘাতে প্রাণ যায় অর্ধলক্ষ মানুষের।
ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন আরও লাখ লাখ মানুষ।
দ্য ফ্রাইডে টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের গণহত্যা পাকিস্তানের সুনামের জন্য ধ্বংসাত্মক ছিল। পাকিস্তানের জেনারেলরা যদিও ৫০ বছর আগের এই গণহত্যার ঘটনা স্বীকার করেনি, এমনকি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাও চায়নি। জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল খান নিয়াজির নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য ও তাদের বাংলাদেশি দোসররা ত্রিশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশিকে হত্যা এবং প্রায় ৪ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসএস