পাকিস্তানে বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত ৮, চলছে গণগ্রেপ্তার
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় এক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের একদিন পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।
পুলিশ বলছে, বিক্ষোভে দেশব্যাপী আটজন মারা গেছেন এবং প্রায় ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের অনেক এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে, এবং বিক্ষুব্ধ জনতা সামরিক সম্পত্তিতে হামলার পর কঠোর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ইমরান খানের গ্রেপ্তার নাটকীয়ভাবে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।
অবশ্য আদালতে আনা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার প্রধানমন্ত্রী পদে দাঁড়ানোর জন্য সম্ভবত আজীবনের জন্য অযোগ্য হয়ে যাবেন। চলতি বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেহবাজ শরিফের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং ইসলামাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে ডেকেছে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সহিংস বিক্ষোভ সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ‘যে অপরাধীরা আইন নিজের হাতে তুলে নেয় তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
এছাড়া গ্রেপ্তারের পর ইমরান খানের সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তর এবং লাহোরে সেনাবাহিনীর কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা চালায়। আর তাই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ৯ মে-কে ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং রাষ্ট্রের সম্পত্তিতে আবারও হামলা হলে প্রতিবাদকারীদের ‘চরম জবাব দেওয়া’ হবে বলে সতর্ক করেছে।
ইসলামাবাদে পুলিশ শিপিং কন্টেনার ব্যবহার করে রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করেছে। এছাড়া ইসলামাবাদের প্রধান একটি সড়কের মাঝখানে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করেছে বিবিসি।
বিক্ষোভকারীরা বুধবার দুপুরের পরে সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। কেউ কেউ তাদের সাথে পিটিআই পতাকা বহন করছিলেন বা ইমরান খানের মুখোশ পরে ছিলেন।
সার্জিক্যাল মাস্ক পরা এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে এসেছি, কিন্তু এই পুলিশ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাব বা যতক্ষণ না তারা ইমরান খানকে মুক্ত করে। অন্যথায় আমরা সারা দেশ অচল করে দেবো।’
২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজের মেয়াদের চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্ট আস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
তবে ইমরানের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট আরও চরম আকার ধারণ করেছে।
টিএম