মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভাকিয়ায় দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সঙ্কট। গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হেগারের পদত্যাগের মাধ্যমে এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতায় আসবে রাশিয়াপন্থি সরকার। যা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য একটি দুঃসংবাদই বটে।

গত বছর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনকে রক্ষায় ও রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসে ইউরোপের দেশগুলো। ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হিসেবে এতে সামিল হয় স্লোভাকিয়াও। এমনকি দেশটি সবার আগে ইউক্রেনকে সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দেয়। কিন্তু রাশিয়াকে প্রতিহত করতে গিয়ে স্লোভাকিয়ারও ক্ষতি হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে দেশটিতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর ডানপন্থি স্মেয়ার-এসডি পার্টির। ফিকো প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার বিরোধীতা করেছেন। এমনকি এ যুদ্ধের জন্য ‘ইউক্রেনের ফ্যাসিস্টদের’ দায়ী করেছেন তিনি। যারা ২০১৪ সাল থেকে যুদ্ধ শুরু করেছে বলে দাবি তার।

২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল এবং ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকা রবার্ট ফিকো বলেছেন, তিনি ‘পশ্চিমা প্রপাগান্ডার’ বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, অস্ত্রের চালান অন্যত্র পাঠিয়ে দেবেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে ‘মূল্যহীন’ কোনো নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হলে ভেটো দেবেন।

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো এডোয়ার্ড হেগার মাত্র ২০২১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তার মধ্য-ডানপন্থি সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যা স্লোভাকিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এরপর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলে এডোয়ার্ড বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। বর্তমানে একটি টেকনোক্র্যাট তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

এডোয়ার্ড হেগারের নেতৃত্বাধীন সরকার অবশ্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরেই ক্ষমতা হারায়। ওই মাসে আস্থা ভোটের মাধ্যমে তার সরকারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এডোয়ার্ড তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তার জোটভুক্ত দল এসএএস পার্টি জোট ছেড়ে চলে যায়। জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাতেই সরকার থেকে সরে দাঁড়ায় দলটি।

আবারও ক্ষমতায় আসতে যাওয়া ফিকো স্লোভাকিয়ার এ সমস্যার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। রাশিয়াকে থামাতে দেশটির তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অথচ স্লোভাকিয়া জ্বালানির জন্য পুরোপুরি রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এমটিআই