দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রত্যন্ত ব্রিটিশ অঞ্চল গফ আইল্যান্ড

নাম ‘গফ আইল্যান্ড’। এটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ব্রিটিশ অঞ্চল এবং বিশ্বের প্রত্যন্ত স্থানগুলোর মধ্যে একটি। আর এই দ্বীপের জন্যই খোঁজা হচ্ছে কর্মী। মিলবে ভালো অংকের বেতনও।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম প্রত্যন্ত দ্বীপ গফ আইল্যান্ডে কাজ করার জন্য কর্মী খুঁজছে একটি ব্রিটিশ বন্যপ্রাণী গোষ্ঠী। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত ব্রিটিশ এই ভূখণ্ডে কোনও স্থায়ী জনসংখ্যা নেই।

গফ আইল্যান্ড দ্বীপটি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১৫০০ মাইল (২৪০০ কিমি) দূরে অবস্থিত এবং সেখানে কোনও বিমানবন্দর নেই। আর তাই গফে পৌঁছানোর জন্য নৌকাযাত্রা করতে হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সেখানে পৌঁছাতে নৌকায় ভ্রমণ করার প্রয়োজন পড়ে সাত দিন।

গফ আইল্যান্ডে লুসি এবং রেবেকা

আর সাত দিনের এই নৌকা যাত্রা সম্পন্ন করে ইতোমধ্যেই গফ আইল্যান্ডে পৌঁছেছেন রেবেকা গুডউইল এবং লুসি ডোরম্যান। তারা বর্তমানে গফ দ্বীপে কাজ করছেন। তারা মোট সাতজন পূর্ণ-কালীন কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন যারা গফ আইল্যান্ডকে নিজেদের বাড়ি বলে থাকেন। একইসঙ্গে এই দ্বীপটি ৮০ লাখ পাখিরও আবাসস্থল।

বিবিসি বলছে, গফ দ্বীপে রেবেকা গুডউইল ও লুসি ডোরম্যান রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব বার্ডস (আরএসপিবি)-এর জন্য কাজ করেন। গফে যাওয়ার আগে লুসি অ্যান্টার্কটিকায় কাজ করতেন। আর রেবেকা কাজ করতেন স্কটল্যান্ডের আরএসপিবি-তে।

প্রত্যন্ত এই দ্বীপে রেবেকার বছর শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। আর তাই আরএসপিবি এখন ফিল্ড অফিসার পদে নতুন একজন কর্মী খুঁজছে। যার বেতন হবে ২৫ হাজার থেকে ২৭ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৩ লাখ ৯ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এই চাকরি পেতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে? বিবিসি বলছে, চাকরির জন্য ‘ঘন ঘন দীর্ঘ দিন’ সামুদ্রিক পাখির প্রজাতিদের ট্র্যাকিং বা অনুসরণ করতে হবে। এবং প্রার্থীদের ‘চ্যালেঞ্জিং এবং প্রত্যন্ত সাব-অ্যান্টার্কটিক পরিবেশে’ বসবাসের জন্য ভালোভাবে মানিয়ে নিতে হবে।

একইসঙ্গে প্রার্থীদের ‘একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিজ্ঞান ডিগ্রি বা সমমানের অভিজ্ঞতা’ এবং সেইসাথে ‘মাঠপর্যায়ে বন্য পাখি/প্রাণী পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা’ থাকতে হবে।

তবে সেখানে বর্তমানে চাকরিরত রেবেকা এবং লুসি গফ আইল্যান্ডে কাজ করতে ইচ্ছুক সম্ভাব্য কর্মচারীদের আগে থেকেই কিছুটা সতর্ক করে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, যারা এখানে চাকরি করতে আসবেন তাদের কঠিন আবহাওয়ায় বসবাস এবং মানিয়ে নেওয়ার মতো সাহসী হতে হবে। এমনকি এক বছরের জন্য কোনও তাজা খাবার তাদের সাথে থাকবে না।

লুসি বলছেন, ‘আমি মনে করি রেবেকা এবং আমি, ব্রিটিশ হওয়ার কারণে ভেবেছিলাম আমরা বৃষ্টিতে বেশ অভ্যস্ত। কিন্তু এখানে অনেক বৃষ্টি হয়। আমরা দক্ষিণ আটলান্টিকের মাঝখানে একটি ছোট শিলায় রয়েছি। তাই আমাদের এখানকার আবহাওয়া বেশ চরম।’

এছাড়া এই এলাকাটি রোয়ারিং ফোর্টিজ বা গর্জনশীল চল্লিশের প্রান্তিকে অবস্থিত। মূলত বিষুবরেখার ৪০ এবং ৫০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী এলাকাকে রোয়ারিং ফোর্টিজ বলা হয়ে থাকে যা প্রধানত শক্তিশালী বাতাসের জন্য কুখ্যাত।

আর তাই এই ধরনের পরিবেশে কেউ যখন নিকটতম দেশ থেকে হাজার মাইলেরও বেশি দূরে থাকে তখন সেখানকার মানুষ কী খায়? মূলত এখানে থাকতে হলে প্যাকেজ করা খাবার বা হিমায়িত খাবারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

লুসি বলছেন, ‘আমরা আসার আগে তারা (আরএসপিবি) আমাদের জন্য অবশ্যই এই বিষয়ে জোর দিয়েছিল। কারণ অনেক লোকের কাছে খাবারের অভাব এবং বিশেষ করে তাজা খাবারের অভাব বেশ বড় বিষয়।’

বছরে একবার অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে গফ আইল্যান্ডের কিছু কর্মচারী ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে এবং আর তাদের স্থলে নতুন কর্মীরা দায়িত্ব নেয়।

বিবিসি বলছে, রেবেকা ও লুসি-সহ এখানকার কর্মীরা দ্বীপের ছানা ও প্রাণীগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ইঁদুরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ আক্রমণাত্মক প্রজাতির এই প্রাণিটি সামুদ্রিক পাখিদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

লুসি বলছেন, ‘তারা (ইঁদুরগুলো) সামুদ্রিক পাখি খেতে শুরু করেছিল। দ্বীপে ইঁদুর ছাড়া তাদের আর কোনও শিকারী নেই এবং তাই তারা ব্যাপক ক্ষতি করছিল। বিশেষ করে সামুদ্রিক পাখির ছোট বাচ্চাদের ওপর ইঁদুরের প্রভাব ছিল অনেক।’

২০১৭-১৮ সালে সামুদ্রিক পাখির ছানাগুলোর জন্য এসব ইঁদুর এতটাই ক্ষতিকর হয়ে উঠেছিল যে ট্রিস্টান অ্যালবাট্রস ছানাগুলোর মাত্র ২১ শতাংশ সেসময় পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়। এছাড়া ব্যাপকভাবে বিপন্ন পেট্রেল প্রজাতির মধ্যে গর্তে বাসা বাঁধে এমন ম্যাকগিলিভ্রের প্রিয়ন প্রজাতির একটি ছানাও সেসময় বাঁচেনি।

আরএসপিবি’র সন্দেহ, বিগত ১৯ শতকে নাবিকদের হাত ধরে ইঁদুর গফ আইল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারী এই দলটি এখন ইঁদুর নির্মূল করার জন্য কাজ করছে।

অবশ্য নির্মূলের ফলে ইঁদুরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে আরএসপিবি এখনও দ্বীপটিকে সম্পূর্ণরূপে ইঁদুর থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়নি।

সুতরাং, যারা গফ আইল্যান্ডে এক বছরের জন্য কাজ করতে আগ্রহী তাদেরকে পাখি, ইঁদুর, হিমায়িত খাবার এবং জনমানব থেকে দূরে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত অঞ্চলে থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

আর ফিল্ড অফিসার পদে আবেদন করার সময়সীমা শেষ হবে আগামী রোববার।

টিএম