আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা বাইডেনের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এনবিসির টকশো অনুষ্ঠান এনবিসি টুডেকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, ‘আমি নির্বাচনে দাঁড়ানের পরিকল্পনা করছি….তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাটি দিতে আরও খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে চাইছি আমরা।’
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ অর্থাৎ আট বছর দেশের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। তবে প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করার পর পরবর্তী মেয়াদে যেতে হলে অবশ্যই তাকে নির্বাচনে জিততে হবে।
ক্ষমতার প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা— সেই সিদ্ধান্ত নেয় হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মূল সিদ্ধান্ত নেন আসলে প্রেসিডেন্ট নিজে।
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। এই জয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বয়সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড করেন তিনি। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে।
এখন জো বাইডেনের বয়স এখন ৭৮ বছর; আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় তার বয়স হবে ৮০ বছর। বয়সজনিত কারণে তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই বাইডেনকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানা গেছে।
তবে বাইডেনের স্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডে জিল বাইডেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চান— তার স্বামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।
২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের রানিংমেট ছিলেন কমলা হ্যারিস, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যদি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাইডেন, সেক্ষেত্রে সেবারও রানিংমেট হিসেবে আসবেন কমলা হ্যারিস।
এক নজরে জো বাইডেন
পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, তবে ‘জো বাইডেন’ নামেই বেশি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেছেন। এর আগে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তাঁর বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
পরিবার: সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। সিনেটর হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।’ ৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৮৭ সালে একবার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। তবে অসুস্থতার কারণে ১৯৮৮ সালে প্রাইমারির শুরুতে ক্ষান্ত দেন তিনি। ২০০৭ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রাইমারিতে নামেন। সেই যাত্রায় তিনি বারাক ওবামা আর হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালে ওবামা তাকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এসএমডব্লিউ