প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তিন বছর পর এই ভাইরাসটির উৎস নিয়ে নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনা গবেষকদের একটি দল। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে সেই প্রতিবেদন প্রকাশিতও হয়েছে।

মহামারির শুরু থেকেই শোনা গেছে,২০১৯ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের হুনান শহরের সী ফুড মার্কেট নামের একটি বাজারে প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে করোনার। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনেও ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে সেই সী ফুড মার্কেট।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বছরেরও বেশি সময় আগে—অর্থাৎ মহামারির শুরুর দিকে ওই বাজারটি থেকে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেসব বিশ্লেষণ করেই প্রস্তুত করা হয়েছে প্রতিবেদনটি।  

২০২০ সালে সংগ্রহ করা আলামত বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এটিই প্রথম গবেষণা প্রতিবেদন যা পিয়ার রিভিউ (অন্য বিজ্ঞানীকে দিয়ে মূল্যায়ন করানো) করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের উৎস এবং কীভাবে ছড়াল, তা জানতে বিভিন্ন গবেষণায় চীনের উহানের সী ফুড মার্কেটের  কথা সবচেয়ে বেশি এসেছে।

উহান শহরের এই বাজারটিতে সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি বন থেকে ধরে আনা বিভিন্ন প্রানী জীবন্ত বা কেটে মাংস হিসেবে বিক্রি করা হতো। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বাজারে বিক্রি হওয়া প্রাণীর সঙ্গে ভাইরাসটির সংযোগ কী, তা দেখানো হয়েছে। কীভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল, তা জানতে বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন প্রতিবেদনটি দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংগৃহীত বিভিন্ন নমুনার মধ্যে যেগুলোতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, সেগুলোতে বিভিন্ন বন্যপ্রানীর জিনগত উপকরণও শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলেছেন, করোনাভাইরাস যে শুরুতে আক্রান্ত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে, তা এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আরও জোরালো হয়ে উঠল।।

বাজারের বিভিন্ন দোকান, খাঁচা এবং যন্ত্রপাতি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এসব নমুনা। তবে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে কেন তিন বছর সময় লেগেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

করোনার বাহক র‌্যাকুন?

র‌্যাকুন

এতদিন পর্যন্ত শোনা গিয়েছিল, সী ফুড মার্কেটে বিক্রি হওয়া বাদুড় কিংবা প্যাঙ্গোলিন (বনরুই জাতীয় প্রাণী) থেকে ছড়িয়েছে করোনা। তবে নতুন গবেষণা প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বাহক হিসেবে উঠে এসেছে কুকুর সদৃশ বন্যপ্রাণী র‌্যাকুনের নাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব নমুনায় ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে— সেগুলোর অধিকাংশই বাজারের ওইসব দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে— যেগুলোতে জীবন্ত অবস্থায় র‌্যাকুন বিক্রি করা হতো।

তবে চীনা গবেষকেরা বলেছেন, কীভাবে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু—সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাননি। পরিবেশ থেকে সংগৃহীত নমুনা দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, এসব প্রাণী আক্রান্ত ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু প্রাণী নয়—বাজারে আসা আক্রান্ত কোনো মানুষ থেকে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডেভিড রবার্টসন করোনাভাইরাসের উৎসস্থল সম্পর্কে জানতে ২০২০ সাল থেকে গবেষণা করছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্টসন বলেন, ‘প্রতিবেদনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো—সবচেয়ে জরুরি তথ্যগুলো এখন প্রকাশিত হয়েছে, যা ব্যবহার করে অন্যরা কাজ করতে পারবেন।’

এসএমডব্লিউ