এশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস।

পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করছে, চীনের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে তাইওয়ানের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে হন্ডুরাস। এছাড়া আর্থিক সহায়তা ও ঋণ পাওয়ার শর্তে দেশটির সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সোমবার (২৭ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, হন্ডুরাস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর সঙ্গে কোনো ধরনের শর্তের সম্পর্ক নেই।

মাও নিংকে জিজ্ঞেস করা হয়, হন্ডুরাস তাইওয়ানের কাছে যে ঋণ সহায়তা চেয়েছিল, সেটি এখন চীন দেবে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে মাও নিং বলেছেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নয়।’

উল্টো তিনি বলেছেন, তাইওয়ান যে স্বাধীনতা চায় এটির অবাস্তব। এ কারণে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলো এখন চীনের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাইওয়ানের সরকারকে বলতে চাই তাইওয়ানের স্বাধীনতার (স্বপ্ন) পতনের দ্বারপ্রান্তে আছে। ডলার কূটনীতিতে কোনো লাভ হবে না। আর যেসব কর্মকাণ্ড ইতিহাসের স্রোতের বিপরীতে যায় সেগুলো ধ্বংস হয়।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্স কয়েকদিন আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এ মাসের শুরুতে হন্ডুরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনরিখ রেইনা তাইওয়ানের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি দেশটির কাছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছিলেন। মূলত অন্য ঋণ পরিশোধ, একটি হাসপাতাল এবং ড্যাম তৈরির জন্য এ অর্থ চাওয়া হয়েছিল।

পরবর্তীতে হন্ডুরাস অবশ্য ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কিন্তু তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ জানান, কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হন্ডুরাস ‘উচ্চ দাম’ চাচ্ছে।

ওই সময় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন হন্ডরাসের এমন আচরণকে ‘চীনের নিগ্রহ এবং ভয়ভীতি দেখানোর অংশ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এখন বলা হচ্ছে, হন্ডুরাস তাইওয়ানের কাছে যে অর্থ চেয়েছিল, ‘পুরস্কার স্বরূপ‘ বেইজিং দেশটিকে এই অর্থ দিতে পারে।

স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই

১৯৪৯ সালের চীনের গৃহযুদ্ধের পর থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে লড়াই করছে চীন-তাইওয়ান।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের একটি প্রদেশ হিসেবে দাবি করে এবং অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের কূটনৈতিক সম্পর্কের তীব্র বিরোধীতা করে।

‘এক চীন’ নীতির সমর্থন পেতে এখন পর্যন্ত কয়েকশ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে চীন। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন চীনের ক্রমবর্ধমান উন্নতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সংশ্লিষ্টতা বাড়ায় লাতিন আমেরিকার দেশগুলো নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। এসব দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এক চীন নীতিকে সমর্থন দিচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ ২০০৭ সালে কোস্টারিকা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর একই পথে হাঁটে পানামা, এল সালভাদর, নিকারাগুয়া এবং ডমিনিকান রিপাবলিক।

হন্ডুরাস তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশের সঙ্গে এ দ্বীপ রাষ্ট্রটির আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রইল। তবে এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, প্যারাগুয়েও তাইওয়ান বিষয়ে ভাববে। অবশ্য প্যারাগুয়ের সিদ্ধান্তটি নির্ভর করছে দেশটির নির্বাচনের ওপর।  

সূত্র: আল জাজিরা

এমটিআই