পাকিস্তানে হামলায় সামরিক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ারসহ নিহত ৫
পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় জ্যেষ্ঠ এক সেনা কর্মকর্তাসহ ৫ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পদবীর এক কর্মকর্তাও রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এবং ডেরা ইসমাইল খানে পৃথক দুই হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। বুধবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারানো পাকিস্তানের ওই সেনা কর্মকর্তার নাম ব্রিগেডিয়ার মোস্তফা কামাল বারকি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর উচ্চপদে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতি বলেছে, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ব্রিগেডিয়ার মোস্তফা কামাল বারকি নিহত হয়েছেন। এসময় আরও সাত সেনা সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার বারকি আঙ্গুর আদা থেকে ওয়ানার দিকে যাওয়ার পথে আফগান সীমান্তের কাছে খামরাং এলাকায় হামলার শিকার হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হওয়া এই হামলায় তার চালকও প্রাণ হারিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী অবশ্য হামলার দায় স্বীকার করেনি। এছাড়া ব্রিগেডিয়ার বারকির পরিবারও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আইএসপিআর বলেছে, ব্রিগেডিয়ার বারকি ও তার দল হামলার মুখে পড়ার পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মাতৃভূমির শান্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড থেকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার পুনঃনিশ্চিত করেছে।
এর আগে হামলার পৃথক ঘটনায় পাকিস্তানে আরও তিন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। তবে এর আগেই তারা ডেরা ইসমাইল খানে তিন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আইএসপিআর-এর মতে, রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীরা খুট্টির একটি পুলিশ চৌকিতে হামলা করে। নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে এলাকাটি ঘিরে ফেলে, রাস্তা অবরোধ করে সন্ত্রাসীদের আটক করে। তীব্র গুলি বিনিময়ের পর তিন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয় এবং তাদের হেফাজত থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।
গুলি বিনিময়ের সময় লোধরানের বাসিন্দা হাভালদার মোহাম্মদ আজহার ইকবাল (৪২), খানওয়ালের বাসিন্দা নায়েক মোহাম্মদ আসাদ (৩৪) এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের বাসিন্দা সিপাহী মোহাম্মদ এসা (২২) বীরত্বের সাথে লড়াই করে নিহত হন। আহত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ডিআই খান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, ওই এলাকায় কোনও সন্ত্রাসী পাওয়া গেলে তা নির্মূল করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর এবং সাহসী সৈন্যদের এই ধরনের আত্মত্যাগ তাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।
দ্য ডন বলছে, পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী গত তিন মাসে অন্তত ১৪২ জঙ্গিকে হত্যা করেছে। এই সময়ের মধ্যে সারাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এক হাজারেরও বেশি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে ব্রিগেডিয়ার মোস্তফা কামাল বারকির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ তরেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘ব্রিগেডিয়ার মো. মোস্তফা কামাল বারকি সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জানতে পেরে দুঃখিত। আমার সমবেদনা এবং প্রার্থনা তার পরিবারের সাথে আছে।’
টিএম