পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানে রাজনৈতিক উত্তেজনা কেবলই বাড়ছে। দেশটির ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজের বাসভবনে অভিযান ও তল্লাশির ঘটনায় জড়িত সকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইমরান।

মূলত তল্লাশি অভিযানের সময় দলীয় কর্মীদের নির্মম মারধর করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। রোববার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের বাসভবন জামান পার্কে অভিযান এবং তল্লাশির সময় দলের কর্মীদের নির্মম মারধরের সাথে জড়িত ‘প্রতিটি কর্মকর্তার’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার ইমরান খান ইসলামাবাদের আদালতে তোষাখানা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাঞ্জাব পুলিশের ১০ হাজারেরও বেশি সদস্য তার বাসভবনে অভিযান চালায়। লাহোরের ওই বাসভবনে প্রবেশের সময় পুলিশের সাথে পিটিআই কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

এর আগেও, কয়েকবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। তবে ইমরানের অনুপস্থিতিতে তার জামান পার্কের বাসভবনে পুলিশ বড় অভিযান শুরু করে এবং কয়েক ডজন পিটিআই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পরে অস্ত্র ও পেট্রোল বোমা জব্দ করার দাবি করে পুলিশ।

তবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান তোষাখানা মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে ইসলামাবাদ থেকে ফিরে আসার পর শনিবার গভীর রাতে ইমরান খানের সমর্থকরা তার বাসভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন।

পরে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান। সেখানে তিনি বলেন, তিনি পাঞ্জাব পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। তার বাসভবনে ‘আক্রমণে’ অংশ নেওয়া ‘প্রতিটি কর্মকর্তার’ বিরুদ্ধে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, পাঞ্জাব পুলিশ ইমরান খানের বাসভবনে জোর করে প্রবেশের সময় দরজা ভাঙতে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিল। অবশ্য পুলিশের অভিযানের সময় ইমরান সেখানে না থাকলেও তার স্ত্রী বুশরা বিবি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন।

নিজের বাড়িতে অভিযানের কথা বলার সময় ৭০ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে, পুলিশ-সেনা কর্মকর্তা-এদেশের বিচারক-জনগণের কাছে ইসলামে চাদর ও চার দিওয়ারির (পর্দা ও দেয়াল) সম্মান সম্পর্কে জানতে চাই।’

ইমরান খান বলেন, তিনি গতকাল রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাগান্বিত হওয়ায় তিনি তা করেননি এবং একজন ব্যক্তির যখন রাগ হয় তখন তার কথা বলা উচিত নয়।

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পাঞ্জাব পুলিশের আইজিকে লাহোর হাইকোর্টের (এলএইচসি) আদেশ লঙ্ঘন করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তার দল আদালত অবমাননার বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

পরে পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, তার দল পাঞ্জাবের মুখ্য সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে ‘জামান পার্কে হামলা ও ডাকাতির’ জন্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রধান সংগঠক মরিয়ম নওয়াজ, নকভি, পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. উসমান আনোয়ার, লাহোর ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার বিলাল সিদ্দিক কামিয়ানাসহ অন্য আরও ১৮ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে।

ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, পিটিআই জামান পার্ক অপারেশন এবং দলীয় কর্মী আলী বিলালের মৃত্যুর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনেরও দাবি করেছে।

এর আগে ইমরান খান প্রশ্ন করেন, কোন আইনে তারা গেট ভেঙ্গে, গাছ ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। তিনি আরও বলেন, আরও খারাপ বিষয় হচ্ছে ইসলামাবাদ আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পর পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়।

ইমরান খান একাধিক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘বুশরা বিবি একজন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তি, বাড়িতে একা ছিলেন। এভাবে বাড়িতে হামলা চাদর এবং চার দিওয়ারি (পর্দা এবং চার দেয়াল) এর পবিত্রতার বিষয়ে ইসলামিক নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, বাড়ির পবিত্রতা লঙ্ঘন, দলীয় কর্মী ও বাড়ির গৃহকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টির পাশাপাশি আদালত অবমাননার বিষয়টিও আদালতে উত্থাপন করা হবে।

টিএম