তোশাখানা মামলা এবং ইসলামাবাদের এক অতিরিক্ত নারী জেলা ও দায়রা জজকে হুমকির পৃথক মামলায় পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতের শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ায় সোমবার দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য দু’টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে।

৭০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গত বছর ওয়াজিরাবাদে গুপ্তহত্যার চেষ্টার শিকার হন। ওই সময় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ৩৭টির বেশি মামলা রয়েছে।

সোমবার তোশাখানা মামলা এবং ইসলামাবাদের এক অতিরিক্ত নারী জেলা ও দায়রা জজকে হুমকির মামলায় আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে কয়েকবার মামলার শুনানিতে হাজির হননি তিনি। তখনও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

ডন বলছে, আজ ইসলামাবাদের দু’টি জেলা ও সেশন আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল পিটিআই প্রধানের। যদিও ইমরান খানের আইনজীবীরা নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে শুনানি থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

ইমরান খান আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাফর ইকবাল (তোশাখানা মামলার বিচারক) এবং জ্যেষ্ঠ বিচারক রানা মুজাহিদ রহিমের আদালত (অতিরিক্ত নারী জেলা ও দায়রা জজকে হুমকির মামলার বিচারক) ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার ও আগামী ১৮ এবং ২১ মার্চ আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা।

• তোশাখানা মামলা

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাফর ইকবালের আদালত তোশাখানা মামলায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এই মামলায় পিটিআই প্রধানকে গ্রেপ্তার করে ১৮ মার্চ আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইমরান খান তোশাখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি অন্তত তিনবার এড়িয়ে গেছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সম্পদের ঘোষণায় তোশাখানা থেকে যেসব উপহার সরিয়ে নিয়েছিলেন, তার বিবরণ গোপন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।

তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।

ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

গত আগস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসিন নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তোশাখানা মামলায় ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করার কথা ছিল দায়রা আদালতের। ওই দিন তার আইনজীবী শুনানি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আরও কয়েকটি আদালতে হাজির হতে হয়েছিল। এরপর বিচারক ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

এর আগেও, দু’বার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পিছিয়ে দেওয়া হয়। গত ৫ মার্চ ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে ইসলামাবাদ পুলিশের একটি দলকে লাহোরে পাঠানো হয়। কিন্তু পিটিআইয়ের প্রধান গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাওয়ায় ইসলামাবাদ পুলিশকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়।

পরবর্তীতে গত সপ্তাহে ইমরান খান তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ৭ মার্চ ইসলামাবাদের হাইকোর্ট ইমরানের জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে এবং তাকে দায়রা আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।

সোমবার শুনানির শুরুতে ইমরানের আইনজীবী খাজা হারিস আদালতকে বলেন, তার মক্কেল আজ হাজির হতে পারবেন না। তিনি হাজির হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা হুমকির কারণে পিটিআই প্রধান আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না বলে জানান এই আইনজীবী।

হারিস বলেন, একই ধরনের আবেদন লাহোর ও ইসলামাবাদ হাইকোর্টেও করা হয়েছে। দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়েও আপত্তি তুলেছেন।

• বিচারককে হুমকির মামলা

একই দিন ইসলামাবাদের জ্যেষ্ঠ বিচারক রানা মুজাহিদ রহিমের আদালতও ইসলামাবাদ হাইকোর্টের একজন অতিরিক্ত নারী জেলা ও দায়রা বিচারক এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকির এক মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আগামী ২৯ মার্চ আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারক বলেছেন, মামলা থেকে ইমরান খানকে অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে যুক্তিতর্ক পরবর্তী শুনানির দিন শোনা হবে।

পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গত ২০ আগস্ট দলটির নেতা শাহবাজ গিলকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ইসলামাবাদের পুলিশ ও বিচার বিভাগের তীব্র সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে পিটিআই ক্ষমতায় ফিরলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আকবর নাসির খান, একজন ডিআইজি এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জেবা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে বলে হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

এই হুমকির পর প্রাথমিকভাবে ইমরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ড বিধি (পিপিসি) এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (এটিএ) বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়া ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও চালু করেছে।

এসএস