ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার প্রবল সংঘর্ষ চলছে। দোনেতস্ক অঞ্চলের পূর্বের এই শহরটি বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই এই শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে রাশিয়া যেন যে কোনও মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।

অথচ প্রতিদিন অবিরাম হামলা চালিয়েও কিছুতেই গোটা শহর কবজা করতে পারছে না রুশ সৈন্যরা। দুই পক্ষই বিশাল সংখ্যক শত্রুদের প্রাণহানির দাবি করছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি যাচাই করার কোনো সুযোগ না থাকায় হতাহতদের সংখ্যা সম্পর্কে কোনও নিরপেক্ষ চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।

রোববার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, গত কয়েক দিনে তার সেনাবাহিনীর হামলায় এক হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। গত ৬ মার্চ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার রুশ সৈন্যের প্রাণহানির দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও কমপক্ষে দশটি গোলাবারুদের গুদামও ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি জেলেনস্কির।

রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, রুশ বাহিনীর অক্রমণে ২৪ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি  ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর সৈন্যরা বাখমুত শহরের পূর্বাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে।

বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রোববার বলেন, বাখমুতের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থলে জোরালো সংঘর্ষ চলছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অসংখ্য সৈন্য কাজে লাগালেও তার বাহিনী আরও অগ্রসর হতে পারবে বলে প্রিগোজিন নিশ্চিত।

গত কয়েক দিন ধরে তিনি প্রকাশ্যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভাবের অভিযোগ করার পর রোববার তিনি সুর নরম করে বলেছেন, অবশেষে মস্কো থেকে গোলাবারুদ আসতে শুরু করেছে। বাখমুত দখল করে ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যসংখ্যা আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন প্রিগোজিন।

এদিকে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে যুদ্ধ ট্যাংক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম ও যথেষ্ট গোলাবারুদ পেলে ইউক্রেন সম্ভবত আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হারানো ভূখণ্ড পুনর্দখল করতে নতুন অভিযান শুরু করবে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইউক্রেনের সৈন্যরা লিওপার্ড ২-এর মতো ট্যাংক চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা রোববার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির উদ্দেশ্যে গোলাবারুদ সরবরাহের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ইউক্রেনের পাইলটদের যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

মূলত এখনই পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এমন বিমান সরবরাহের প্রত্যাশা না করলেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে প্রয়োজন হতে পারে, তাই পাইলটদের প্রস্তুত রাখতে চান ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

টিএম