যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক সংস্থা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ মার্চ) দেউলিয়া হয়ে যায়। এরপর এটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ব্যাংকে যাদের ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা এর কম অর্থ গচ্ছিত রয়েছে তারা আগামী সোমবারের মধ্যে এ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু যাদের এর বেশি অর্থ আছে তাদের অপেক্ষা করতে হবে। সিলিকন ভ্যালিতে যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি লেনদেন করতেন তাদের বেশিরভাগের অ্যাকাউন্টেই ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি অর্থ রয়েছে। ফলে ব্যাংকটির বেশিরভাগ গ্রাহকের অর্থই আটকে গেছে। এখন কবে তারা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই।  

সিলিকন ভ্যালি মূলত নতুন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ প্রদান ও সহায়তা করত। এখন ব্যাংকটিতে ধস নামার বিষয়টি প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।

তাৎক্ষণিক যে সমস্যাটা দেখা যাবে সেটি হলো— যেসব প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের সঙ্গেই লেনদেন করত, সেসব প্রতিষ্ঠান আগামী কয়েক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে কর্মীদের বেতন দিতে পারবে না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের ছাঁটাই বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাতে পারে।

এর পরবর্তী ও মধ্যবর্তী যে প্রভাব পড়তে পারে সেটি হলো— যেসব প্রতিষ্ঠান অন্য ছোট ব্যাংকগুলোতে তাদের অর্থ গচ্ছিত রেখেছে, সেসব ব্যাংকে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে, মানুষ অর্থ উত্তোলন করে ফেলতে পারেন এবং এতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়তে পারে।

আর দীর্ঘকালীন যে প্রভাব পড়তে পারে সেটি হলো— সরকার শেষ পর্যন্ত সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে বেইলিং দিতে পারে। যা প্রমাণ করবে আমেরিকান ব্যবস্থায় যে কোনো ব্যাংকেই ধস নামতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ম্যাট লেভিন বলেছেন, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক মূলত ছিল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নির্ভর। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই তাদের লেনদেন বেশি হতো। করোনা মহামারির আগে ২০২০ সালে ব্যাংকটির ডিপোজিট ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু মহামারির মধ্যে ২০২২ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ বিলিয়ন ডলারে। ব্যাংকগুলো মূলত এসব অর্থ বিভিন্ন সুদ হারে ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংকের ডিপোজিট বেড়ে গেলেও ওই সময় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নেয়নি।

আর স্বাভাবিকের তুলনায় ডিপোজিট বেশি হয়ে যাওয়ায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ড কিনে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কিন্তু সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় ওই বন্ডগুলোর দাম কমে যেতে পারে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি।

পরবর্তীতে নগদ অর্থের যোগান দিতে লসে বন্ড বিক্রি করে দেয় ব্যাংকটি। এতে গ্রাহকদের মনে আশঙ্কা দেখা দেয়, তাদের অর্থ হয়ত দিতে পারবে না ব্যাংক। এ আশঙ্কা থেকে গণহারে নিজেদের অর্থ উত্তোলন শুরু করেন তারা। এ বিষয়টিই ব্যাংকে ধস নামায়। যদি তারা অর্থ উত্তোলন না করতেন তাহলে হয়ত এ ঘটনা ঘটত না।

সূত্র: দ্য আটলান্টিক

এমটিআই