মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি
যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাত চায় না রাশিয়া
টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। এতে করে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পরোক্ষভাবে অনেকটা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই লড়ছে মস্কো।
এমন অবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন সময় রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সরাসরি সংঘাতের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে মার্কিন এক গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাত চায় না রাশিয়া।
বিজ্ঞাপন
বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার প্রকাশিত অ্যানুয়াল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায় বিশ্বাস করে- রাশিয়া ‘সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর সাথে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ চায় না, তবে এটি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার উস্কানিবিহীন আগ্রাসনে সৃষ্ট যুদ্ধ এমন একটি ঘটনা যা পশ্চিমা দেশ ও চীনের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ককে পুনর্নির্মাণ করছে এবং আরও বিস্তৃতভাবে অনিশ্চয়তাও সৃষ্টি করেছে।
কারণ ইউক্রেনে চলমান এই যুদ্ধ রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ক্রমবর্ধমান বৃহত্তর ঝুঁকি বহন করছে। এটি এমন একটি ঝুঁকি যা বিশ্ব কয়েক দশক ধরে সম্মুখীন হয়নি।
মার্কিন ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ান নেতারা এখন পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ নেওয়া এড়িয়ে গেছেন যা ইউক্রেনের সীমানার বাইরে দেশটিতে চলমান সংঘাতকে ছড়িয়ে দেবে। তবে (ইউক্রেনীয় সীমানার বাইরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার) এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে এখনও রয়ে গেছে।’
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভ্যন্তরীণ অবস্থানকে দুর্বল করছে এবং এর ফলে হারানো জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার প্রয়াসে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া আরও অতিরিক্ত বর্ধিত পদক্ষেপ নিতে পারে বলে বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া এমন দাবিও বেশ জোরালো হচ্ছে যে, রাশিয়াকে দুর্বল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং মার্কিন ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপের ফলেই কেবল ইউক্রেনের সামরিক সাফল্য এসেছে এমন ধারণায় রাশিয়া আরও ক্রুদ্ধ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মস্কো তার নিজের স্বার্থ এগিয়ে নিতে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে থাকবে। এগুলো সামরিক, নিরাপত্তা, ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টিকারী, সাইবার এবং গোয়েন্দা সরঞ্জাম হতে পারে। আমাদের আশঙ্কা, মস্কো যখন তার স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে দেখবে তখন আরও বেশি সংকটের মধ্যে দেশটি নিজেকে প্রবেশ করাবে।
মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তার আশপাশে অস্তিত্বের হুমকি অনুভব করলে সেটি পুতিনের শাসনকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে। আর তাই সহযোগিতা জোরদার এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করার জন্য বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসাবে জ্বালানিকে ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া।
অতীতে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রপ্তানিকারক গ্যাজপ্রম বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে এসব দেশসহ বিশ্বে বহু দেশেই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্কিন ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে অবরুদ্ধ করে বা দখল করে, শস্যের অবকাঠামো ধ্বংস করে, কৃষি জমির বিশাল অংশ দখলের পর ফলন ব্যাহত করে, শ্রমিকদের বাস্তুচ্যুত করে এবং এমনকি রপ্তানির জন্য নির্ধারিত শস্য চুরি করে খাদ্যকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি এবং মূল্য বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
টিএম