জোট গঠন করে ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির বেশ কয়েকটি দল। পরে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সরকারও গঠন করে তারা। এরপর বিরোধী নেতা হিসেবে ইমরান দেশটির ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিলেও এবার অসন্তোষ দেখা দিয়েছে খোদ জোট সরকারের ভেতরেই।

প্রতিশ্রুতি পূরণ করা বা না করা নিয়ে সৃষ্ট এই অসন্তোষের জেরে এবার পাকিস্তানের সরকারে ভাঙনের সুর দেখা দিয়েছে। সোমবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি পূরণ করা বা না করা নিয়ে পাকিস্তানের সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি।

তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি সিন্ধু প্রদেশের বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে তবে তার দলের পক্ষে ফেডারেল সরকারের অংশ হিসেবে থাকা খুব কঠিন হবে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নিজের জোট সরকারের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে ‘সিন্ধুতে বন্যা দুর্গতদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে’ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি।

রোববার করাচিতে বন্যাকবলিত কৃষকদের জন্য বিআইএসপির অধীনে বীজ ভর্তুকি কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিলাওয়াল বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা পূরণ করা প্রয়োজন অন্যথায় আমাদের (ফেডারেল সরকারের) অংশ হিসেবে থাকা কঠিন হবে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সিন্ধু প্রদেশের খয়েরপুর জেলার বন্যাকবলিত পীর গুড্ডু এবং কোট ডিজি এলাকায় বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ পরিদর্শন করেন এবং বন্যা দুর্গতদের জন্য ঘর নির্মাণের ঘোষণা দেন।

পিপিপি নেতা ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ফেডারেল সরকার বন্যার্তদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বন্যাকবলিত জনগোষ্ঠী কঠিন সময় পার করছে।

বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বন্যা দুর্গতদের অগ্রাধিকার দেওয়া। তার ভাষায়, ‘যদি ফেডারেল সরকার বা প্রধানমন্ত্রী (শেহবাজ শরিফ) কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো পূরণ করতে হবে।’

সিন্ধু প্রদেশের ক্ষমতায় রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপি চেয়ারম্যানের মতে, সিন্ধুর ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পরিষদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সামনেও বিষয়টি উত্থাপন করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ফেডারেল সরকার (প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে) তাদের উদ্বেগ দূর করবে।

 
 
 
 
 

এছাড়া পাকিস্তানে চলমান দেশটির প্রথম ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়েও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম এই ডিজিটাল আদমশুমারিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। একইসঙ্গে সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ চলমান আদমশুমারির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় সিন্ধুতে আবাসন আদমশুমারির ফলাফলে ব্যাপক পার্থক্য ছিল উল্লেখ করে বিলাওয়াল বলেন, আমরা ২০১৮ সালের আদমশুমারির ফলাফলে আপত্তি জানিয়েছিলাম। এছাড়া সেসময় আবাসন আদমশুমারির ১০ শতাংশ পুনঃগণনার দাবি করেছিলেন বলেও জানান এই পিপিপি নেতা।

ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকারের নাম না করে বিলাওয়াল বলেন, ২০১৮ সালের সেই আদমশুমারি লক্ষ্য ছিল একটি ‘বাছাইকৃত’ দলকে ক্ষমতায় আনা। সিন্ধু আন্তঃ-প্রাদেশিক বৈঠকে আদমশুমারি নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তার প্রদেশ ইতোমধ্যেই ফেডারেল সরকারের কাছে ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়ে আপত্তি পাঠিয়েছে।

তার ভাষায়, ‘এমনকি আমি জানতামও না যে এবারের আদমশুমারি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।’

পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি একটি বা দু’টি প্রদেশে ভোট ভিন্ন আদমশুমারির ভিত্তিতে হয় এবং অন্য প্রদেশের নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ডিজিটাল আদমশুমারির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা পিপিপির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’

ফেডারেল সরকার এসব অভিযোগের কোনও প্রতিকার না করলে সিন্ধু সরকার ডিজিটাল আদমশুমারিকে সমর্থন করবে না বলেও ঘোষণা দেন পিপিপি চেয়ারম্যান।

টিএম