তাইওয়ানের সাথে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ চান চীনের প্রধানমন্ত্রী
তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও পশ্চিমাদের মধ্যে বরাবরই বিরাজ করছে উত্তাপ। গত বছর পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ ভূখণ্ডটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় শীর্ষ ক্ষমতাধর রাজনীতিকের সফর এবং এর জেরে ভূখণ্ডটির চারপাশে চীনের জোরালো সামরিক মহড়ায় উত্তেজনার পারদ বেড়ে যায় আরও।
এতে করে তাইওয়ানের প্রতি চীনের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তবে তাইওয়ানের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনে’ আগ্রহী চীনের প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে এই পুনর্মিলন প্রক্রিয়াকে সরকারের এগিয়ে নেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। রোববার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং রোববার বলেছেন, সরকারের উচিত তাইওয়ানের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং চীনের সঙ্গে ভূখণ্ডটির ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া। এর পাশাপাশি তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, গণতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজস্ব এলাকা বলে দাবি করে থাকে চীন। এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি গত তিন বছরে দ্বীপ ভূখণ্ডটির কাছে তার সামরিক কার্যকলাপ বাড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের চারপাশে ব্যাপক সাসরিক মহড়া পরিচালনা করে চীন।
রোববার চীনের পার্লামেন্টের বার্ষিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। তিনি বলেন, বেইজিং ‘এক চীন’ নীতির পক্ষেই রয়েছে।
বেইজিংয়ের বিশাল গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘তাইওয়ান প্রশ্ন সমাধানের জন্য সরকারের উচিত আমাদের পার্টির নীতি বাস্তবায়ন করা’ এবং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং পুনঃএকত্রীকরণের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত আন্তঃপ্রণালী সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং চীনের শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া।’
তবে তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ স্বৈরাচারী চীনের শাসনের অধীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি বলে দাবি করছে রয়টার্স। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বারবার চীনের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে চীন সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ বেইজিং তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে মনে করে।
অবশ্য তাইওয়ানের সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবির তীব্র বিরোধিতা করে বরাবরই বলে আসছে, দ্বীপ-ভূখণ্ডটির শুধুমাত্র ২৩ মিলিয়ন মানুষই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
২০২১ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
টিএম