আধুনিক যুগের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তুরস্ক। ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগকারী এই দেশটিতে ভূমিকম্পে ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলো নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে তুর্কি সরকার। আর এর জেরে এক মেয়রকে আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৬০০ জনেরও বেশি লোকের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে দেশটিতে।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে তুরস্কের বিপর্যয়কর ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোর জন্য ৬০০ জনেরও বেশি লোকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দেশটির বিচার মন্ত্রীর বরাতে জানা গেছে।

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদাগ শনিবার বলেছেন, ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় ৬১২ জন সন্দেহভাজনদের মধ্যে ১৮৪ জনকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। তারা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের দিয়ারবাকিরের একটি সমন্বয় কেন্দ্র থেকে টেলিভিশনে তিনি বলেন, হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে নির্মাণ ঠিকাদার এবং ভবন মালিক বা ব্যবস্থাপক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বোজদাগ আরও বলেন, ‘ফৌজদারি তদন্তের ভিত্তিতে ধসে পড়া ভবনগুলো থেকে প্রমাণ শনাক্তকরণ অব্যাহত রয়েছে।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। এতে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল তুরস্কেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া উত্তর সিরিয়ায় আরও সাড়ে ৫ হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে।

ভূমিকম্পে তুরস্কে ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে গেছে বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে সেসব ভবনের কাঠামোগত মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া তুরস্কের বিরোধী দলগুলো দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিল্ডিং প্রবিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে।

এদিকে ধসে পড়া ভবনগুলোর তদন্তের অংশ হিসেবে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি একটি শহরের মেয়রকে আটক করা হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম শনিবার জানিয়েছে। আটককৃত ওই মেয়রের নাম ওকেস কাভাক।

তিনি তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি জেলার প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) সদস্য। ভবন নির্মাণের পর সেগুলো যথাযথভাবে পরিদর্শন নিশ্চিত করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ৯ হাজার ৪৭০টি আফটারশক আঘাত হেনেছে।

রাজধানী আঙ্কারায় এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এএফএডি’র মহাব্যবস্থাপক ওরহান তাতার বলেন, ‘এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে ... আমাদের আশঙ্কা, এই আফটারশকগুলো কমপক্ষে দুই বছর স্থায়ী হবে।’

টিএম