আয়কর কর্মকর্তাদের তল্লাশির সময় দিল্লিতে বিবিসি অফিসের বাইরে পুলিশের অবস্থান

ভারতে কর্মীদের নির্ভয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে বলেছেন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি। সংস্থাটির ভারতীয় সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক ইমেইলে তিনি একথা বলেন।

টিম ডেভি বলেছেন, বিবিসি নির্ভয়ে এবং নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন অব্যাহত রাখবে। দুই দশক আগে ভারতের গুজরাটে সংঘটিত দাঙ্গায় দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসির একটি ডকুমেন্টারিকে ঘিরে নানা ঘটনাপ্রবাহের পর সংস্থাটির মহাপরিচালকের কাছ থেকে এই মন্তব্য সামনে এলো।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডকুমেন্টারি প্রকাশের পর দিল্লি আর মুম্বাইতে বিবিসির দপ্তরে ভারতের আয়কর বিভাগের তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার রাতে বিবিসির ভারতীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এই ইমেইলটি আসে।

বিবিসি জানিয়েছে, তারা ওই তদন্তে আয়কর বিভাগের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতে বিবিসির কর্মীরা যে সাহস দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে টিম ডেভি বলেছেন- নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হতে পারে না।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়ে বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সেই সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে বিবিসি। তবে ওই তথ্যচিত্রটি বিবিসি ভারতে সম্প্রচার করেনি। সেটি শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের দর্শকদের জন্য প্রচার করা হয়েছিল।

ভারত সরকার ওই তথ্যচিত্রটিকে ‘শত্রুতাপূর্ণ অপপ্রচার’ বলে আখ্যায়িত করে এবং ওই দেশে যাতে তথ্যচিত্রটি দেখা না যায়, সেই ব্যবস্থাও নেয়। অনেক মানুষ ওই তথ্যচিত্রটি সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করে শেয়ার করছিলেন।

টিম ডেভি বলেছেন, সংবাদকর্মীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে আর নিরাপদে তাদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করবে বিবিসি। তিনি লিখেছেন, ‘ভয়-ভীতি ছাড়া, নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশনের থেকে আমাদের কাছে আর কোনও কিছুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

তার ভাষায়, ‘বিশ্বব্যাপী আমাদের দর্শকদের কাছে স্বাধীন আর নিরপেক্ষভাবে সত্যটা পৌঁছিয়ে দেওয়াই আমাদের কাজ। আমাদের লক্ষ্য কীভাবে সবথেকে সৃজনশীল উপায়ে আমরা তা দর্শকদের উপহার দিতে পারি। এই কর্তব্য থেকে আমরা কখনোই বিরত থাকব না।’

ওই ইমেইলে টিম ডেভি আরও লিখেছেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই। বিবিসির কোনও অ্যাজেন্ডা নেই। আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করি। প্রথম উদ্দেশ্যটা হলো নিরপেক্ষ সংবাদ এবং তথ্য পরিবেশন, যাতে মানুষ তার চারপাশের দুনিয়াটাকে ভালো করে বিশ্লেষণ করতে পারেন।’

ভারতের আয়কর বিভাগ তিন দিন ধরে বিবিসির দু’টি দপ্তরে তল্লাশি চালিয়েছিল, যেটিকে তারা ‘সার্ভে’ বলে বর্ণনা করছে। ওই ‘সার্ভে’ থেকে তারা আয়কর সংক্রান্ত বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে বলেও জানিয়েছে আয়কর বিভাগ।

বিবিসি জানিয়েছে, তাদের কাছে আয়কর বিভাগ থেকে সরাসরি যে সব প্রশ্ন করা হবে, তার উপযুক্ত জবাব তারা দেবে। অবশ্য যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিরোধী সংসদ সদস্যরা ওই আয়কর হানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যদিও যুক্তরাজ্যর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের আয়কর বিভাগের ওই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও তারা বলেছে ‘ওই ঘটনার ওপরে নজর রাখা হচ্ছে এবং বিবিসির স্বাধীন সাংবাদিকতাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছে’।

টিএম