টানা এক বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (ফাইল ছবি)

ইউক্রেনে অস্ত্র প্রেরণ শান্তি আনতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে চীন। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটি জাতিসংঘে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছরে ঘটা ‘নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো যথেষ্ট যে প্রমাণ সামনে এনেছে, তা হলো- (ইউক্রেনে) অস্ত্র প্রেরণ শান্তি বয়ে আনতে পারে না’।

এক বছর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। অন্যদিকে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং সামরিক জোট ন্যাটো বেইজিংকে সতর্ক করার কয়েকদিন পরই এই মন্তব্য করল চীন।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে চীনের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর ডাই বিং বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে এই মন্তব্য করেন।

সেখানে তিনি বলেন, ‘আগুনে জ্বালানি দেওয়া হলে তা কেবল উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করা এবং সম্প্রসারণ করা হলে তা কেবল সাধারণ মানুষকে আরও বেশি মূল্য চোকাতে বাধ্য করবে।’

আল জাজিরা বলছে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘বিস্তৃত, ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহার ও যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এসব মন্তব্য করেন চীনের দূত।

ওই প্রস্তাবে বলা হয়, জাতিসংঘের সনদ মেনে ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। ১৪১ টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সাতটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানসহ ৩২টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে প্রথম আক্রমণ চালিয়েছিল রাশিয়া। তার ঠিক এক বছর পর জাতিসংঘে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হলো। ইউরোপ এবং আমেরিকার অধিকাংশ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

প্রস্তাবের বিপক্ষে থেকেছে রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, মালি, ইরিত্রিয়া এবং নিকারাগুয়া। ভোটদান থেকে বিরত থাকা ৩২টি দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- ভারত, পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। এছাড়া মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু দেশও ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

আল জাজিরা বলছে, এক বছর আগে রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো গত সপ্তাহে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে।

একইসঙ্গে বেইজিংকে এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্কও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল গত সপ্তাহে মিউনিখে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি বলেন, তিনি ওয়াংকে রাশিয়ার জন্য চীনা সামরিক সহায়তার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

বোরেল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি খুব স্পষ্ট এবং দৃঢ় ছিলেন।’

তার ভাষায়, ‘তিনি (ওয়াং) আমাকে যা বলেছিলেন তা আমি কেবল পুনরাবৃত্তি করতে পারি: চীন রাশিয়ার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে না এবং চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করবে না। কারণ চীনের পররাষ্ট্র নীতিতে সংঘাতে লিপ্ত কোনও পক্ষকে অস্ত্র না দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

চীনের রাষ্ট্রদূত ডাই বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেন সংকট সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত আছি।’

মস্কো তার প্রতিবেশীকে আক্রমণ করার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, হুমকি দিলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এর জবাবে ডাই বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, এমনকি পরমাণু যুদ্ধও করা যাবে না।’

তার ভাষায়, ‘সকল পক্ষকে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকির বিরুদ্ধে একত্রিত হতে হবে, পারমাণবিক বিস্তার রোধ করতে হবে এবং পারমাণবিক সংকট এড়াতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।

উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে এসেছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।

টিএম