ঠিক এক বছর আগে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া (ফাইল ছবি)

ঠিক এক বছর আগে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। এরপর থেকে যুদ্ধ চলছেই। অবশ্য এক বছর পর এসে এখনও কোনও পক্ষই আলোচনা চাইছে না। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে- কবে বন্ধ হবে যুদ্ধ? আর পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে শান্তিই বা ফিরবে কবে?

গত এক বছরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা মারা গেছে। ইউক্রেনের বেশ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। ইউক্রেনের বহু ছোট-বড় শহর ধ্বংস হয়েছে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এক বছর পরেও সংঘাত বন্ধের কোনও চিহ্নই নেই।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চেয়েছিলেন, পুরো ইউক্রেন দখল করে নিতে। এখন ইউক্রেনের পাঁচভাগের একভাগ এলাকা রাশিয়ার দখলে আছে। আর ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, রাশিয়াকে তাদের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ইউক্রেনের আছে। এমনকি ক্রিমিয়াও তারা রাশিয়ার দখলমুক্ত করবেন।

গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে আগ্রাসন বন্ধের কোনও ইঙ্গিত তিনি দেননি। পুতিন ঘোষণা করেছেন, রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ হারাতে পারবে না।

তিনি আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নিউ স্টার্ট চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসবেন না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হঠাৎ ইউক্রেন সফরের প্রতিক্রিয়া এইভাবেই জানিয়েছেন পুতিন।

এদিকে শান্তি আলোচনা শুরু করার পক্ষে চাপ বাড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলের রাজনীতিক ওয়াগেনকানেক্ট এবং নারীবাদী অ্যালিস সোয়ারজার প্রচার শুরু করেছেন, অবিলম্বে আলোচনা করতে হবে এবং অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেন কোনও ছোট লড়াইয়ে জিততে পারে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র যে দেশের হাতে আছে, তাদের হারাতে পারবে না। পাঁচ লাখ মানুষ তাদের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত একটি ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উদ্বেগ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই আছে।

সামরিক জোট ন্যাটোর জেনারেল সেক্রেটারি জেনস স্টলটেনবার্গ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষে শান্তির জন্য একতরফা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে তারা আর থাকতে পারবে না।

তার মত ছিল, ইউক্রেনের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্যই পশ্চিমা দেশকে অস্ত্র সাহায্য করে যেতে হবে। জার্মানির লিওপার্ড ২ ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে।

ইউক্রেনের আশা, এই অত্যাধুনিক ট্যাংক তাদের রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার কাজে সাহায্য করবে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিকো ল্যাঙ্গে বলেছেন, ইউক্রেন যে আবার তাদের পুরো ভূখণ্ড উদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবসম্মত। রাশিয়ার সেনার ওপর চাপ পড়লে তারা আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হবে।

ল্যাঙ্গে মনে করছেন, রাশিয়া বিপক্ষকে মানসিকভাবে চাপে রাখতেই পরমাণু অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শান্তি আলোচনা শুরু করা ও সফল হওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া দখল করতে হবে। তাহলে রাশিয়া চাপে পড়ে যাবে। পুতিনের মুখও পুড়বে।

কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হেলমুট গ্যানসের মনে করেন, যদি ইউক্রেনের ট্যাংক ক্রিমিয়ার দিকে যায়, তাহলে পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রকে প্রসারিত করে দেবেন। তিনি তখন ইউক্রেনের প্রতিবেশী কিছু দেশকে আক্রমণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইউরোপ আরও বিপাকে পড়ে যাবে।

কী করলে রাশিয়া আলোচনায় বসবে?
এই বিষয়ে নানা ধরনের মত আছে। একটা মত হলো, রাশিয়ার ওপর সামরিক চাপ বজায় রাখতে হবে। তাহলেই তারা আলোচনায় বসবে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, জার্মানি কোনোভাবেই যুদ্ধের মধ্যে ঢুকবে না। সেকারণেই ট্যাংক পাঠাতে দেরি করেছে জার্মানি। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে, সেনা পাঠালেই যুদ্ধে অংশ নেওয়া বোঝায়। যেটা জার্মানি কোনোভাবেই করতে চায় না।

ইউক্রেনের সমর্থক দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশের মত হলো, ইউক্রেনকেও শান্তির জন্য এগোতে হবে। না হলে কখনোই শান্তি আসবে না।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জোহানেস ভারউক মনে করেন, ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাহলেই রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্রিমিয়া থেকেও রাশিয়া সরে আসতে পারে।

চীনের ভূমিকা
মিউনিখ সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকে চীন জানিয়েছে, তারা শিগগিরই একটা শান্তিপ্রস্তাব দিচ্ছে। তবে তাতে কী থাকবে তা জানায়নি দেশটি।

তবে পশ্চিমা দেশগুলো এই প্রস্তাব নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। চীনের প্রস্তাব মেনে যুদ্ধ থামবে বলে তারা মনে করছে না।

টিএম