রুশ আগ্রাসনে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ গড়ালো দ্বিতীয় বছরে। ছবি: এপি

দিন-সপ্তাহ-মাসের পর মাস পেরিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ গড়ালো দ্বিতীয় বছরে। আর এই দিনকে সামনে রেখেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে যুদ্ধ তথা রুশ আগ্রাসন বন্ধে ফের সরব হয়েছে জাতিসংঘ।

সংস্থাটি রাশিয়াকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোটাভুটির মাধ্যমে এই আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোটাভুটির মাধ্যমে রাশিয়াকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে ইউক্রেন থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানানো হয়।

এএফপি বলছে, ইউক্রেনের সমস্ত এলাকা থেকে বিনা শর্তে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারে আনীত নতুন এক প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে কিয়েভ। এদিন ভোটাভুটিতে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪১ সদস্যের সমর্থন পায় কিয়েভ।

অন্যদিকে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সাত সদস্য রাষ্ট্র। এছাড়া ভারত ও চীনসহ ৩২টি সদস্য রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। 

নৃশংস এই যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে হওয়া এই ভোটভুটিতে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় কিয়েভের প্রতি সমর্থন সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। সেসময় ১৪৩টি দেশ রাশিয়ার চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে সংযুক্ত করার ঘোষণার নিন্দায় ভোট দিয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আজ, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ খুব স্পষ্ট কথা বলেছে। এই ভোট এটাই দেখায় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

টানা দুই দিনের বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের সময় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘ভালো এবং মন্দের মধ্যে’ যেকোনও একটিকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এছাড়া কিয়েভ শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের প্রধান পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তা উপভোগ করছে বলে যে ধারণা রয়েছে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক ‘রুশ আগ্রাসনের বার্ষিকীতে ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়ানো’ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব বোঝে সত্য কার পক্ষে।

এদিকে ভোটভুটিতে পাস হওয়া প্রস্তাবে ইউক্রেনের ‘সার্বভৌমত্ব’ এবং ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ এর পক্ষে সমর্থন পুনঃনিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া রুশ দখলে চলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অংশগুলোতে রাশিয়ার যে কোনও দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

একইসঙ্গে এই প্রস্তাবে ‘রাশিয়ান ফেডারেশনকে অবিলম্বে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে তার সমস্ত সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করার’ দাবি করার পাশাপাশি ‘শত্রুতা বন্ধ করার’ আহ্বানও জানানো হয়েছে।

এর আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আরও একবার জোরালো ভাষায় আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। এই যুদ্ধ ইউরোপ এবং সারা বিশ্বকে কতটা বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি।

যুদ্ধের এক বছর পূর্তির একদিন আগে বুধবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় ভাষণে অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, এই যুদ্ধ ‘আঞ্চলিক অস্থিরতা’ উসকে দিচ্ছে এবং সেই সাথে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা এবং বিভেদ সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, আর এ কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংকট সমাধানের ওপর থেকে নজর এবং সম্পদ সরে যাচ্ছে। গুতেরেস হুঁশিয়ার করেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরোক্ষ হুমকির কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসার এখন উপযুক্ত সময়।

টিএম