নাবলুসে যেভাবে ১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল
অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই অভিযানে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের একাধিক সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকও রয়েছেন।
বুধবার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা নাবলুসের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করার সাথে সাথে বিস্ফোরণ ঘটে এবং বন্দুকধারীদের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, অভিযানে গিয়ে সৈন্যরা নাবলুসের একটি ভবন ঘেরাও করেছিল; যেখানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত তিন সশস্ত্র ফিলিস্তিনি লুকিয়ে ছিলেন। সৈন্যদের লক্ষ্য করে তারা গুলি চালান। পরে পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই ওই ফিলিস্তিনিরা মারা যান।
নাবলুসের ওই ভবনে অভিযানের সময় অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি, বিস্ফোরক, পেট্রোল বোমা ও পাথর নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে সৈন্যরা পাল্টা গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, অভিযানে নিহতদের মধ্যে ৭২ বছর বয়সী আদনান সাবে বারা নামের এক বৃদ্ধও রয়েছেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রাচীন নগরী নাবলুসের ব্যস্ততম বাজারের একটি সড়কে রুটির ব্যাগের কাছেই পড়ে আছে তার মরদেহ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আবদুল হাদি আবদুল আজিজ আশকার নামে ৬১ বছর বয়সী অপর এক বৃদ্ধ ও ১৬ বছর বয়সী কিশোর মোহাম্মদ ফরিদ শাবানও ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে মারা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তারা।
• নাবলুসে কেন অভিযান?
নাবলুসে বুধবারের অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ইসলামিক জিহাদের সদস্য মোহাম্মদ আবদুল ফাত্তাহ (২৩), ওয়ালিদ দাখাইল (২৩) এবং লায়নস ডেন গোষ্ঠীর হুসাম ইসলাম (২৪) ছিলেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, ওই তিন ফিলিস্তিনি আগের এক হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। গত অক্টোবরে ফিলিস্তিনিদের হামলায় ইসরায়েলি এক সৈন্য নিহত হন। এই ফিলিস্তিনিরা অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর আবারও হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র ইসরায়েলি এই অভিযানের নিন্দা এবং উত্তেজনা বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েলি সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এই অঞ্চলকে আরও বেশি উত্তেজনা ও বিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
• হামাসের হুঁশিয়ারি
গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে শত্রুদের পরিচালিত ক্রমবর্ধমান অপরাধের ওপর নজর রাখছে। ইসরায়েলি বর্বরতায় হামাসের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস এবং এর পার্শ্ববর্তী জেনিন উপত্যকায় প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এসব এলাকা। গত বছরের শুরু থেকে নাবলুস ও জেনিনে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ তীব্র হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি সমঝোতার মাঝেই নাবলুসে প্রাণঘাতী এই সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলি সৈন্যদের অভিযানে ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিক ও সশস্ত্র স্বাধীনতাকামীরাও রয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
এসএস