যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ‘নিউ স্টার্ট’ পারমাণবিক চুক্তি আসলে কী?
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে এক যুগের বেশি সময় আগে স্বাক্ষরিত বহুল আলোচিত পারমাণকি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ স্থগিত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমারা রাশিয়ার কৌশলগত বিমান ঘাঁটিতে হামলার প্রচেষ্টায় সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করার পর মঙ্গলবার এই চুক্তি স্থগিত করেছেন তিনি।
রাশিয়ার পার্লামেন্টে বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’ ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমি আজ এই ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছি যে, রাশিয়া স্ট্র্যাটেজিক অফেনসিভ আর্মস ট্রিটিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করছে।’
বিজ্ঞাপন
♦ নিউ স্টার্ট চুক্তি কী?
২০১০ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ‘দ্য নিউ স্টার্ট’ নামের দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড, স্থল ও সাবমেরিন-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান মোতায়েনের লাগাম টানা হয়।
২০১১ সালে কার্যকর হওয়া এই চুক্তির মেয়াদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত বছর পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছিল। উভয় পক্ষ চুক্তির শর্ত মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন এবং রুশ পরিদর্শকরা দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
• আরও পড়ুন: বিশ্বযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে পশ্চিমারা : পুতিন
চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড, স্থল ও সাবমেরিন-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান মোতায়েনের লাগাম টানা হয়। বিশ্বে বর্তমানে রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির কাছে প্রায় ৬ হাজার ওয়ারহেড রয়েছে।
নিউ স্টার্ট চুক্তিতে উভয় দেশ এক হাজার ৫৫০টি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড ও সর্বাধিক ৭০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করতে পারবে বলে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়।
কেউ চুক্তির সীমা লঙ্ঘন করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে উভয়পক্ষ প্রত্যেক বছর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রাগার ১৮ বার পর্যন্ত পরিদর্শন করতে পারতেন। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চে এই পরিদর্শন স্থগিত হয়ে যায়।
• আরও পড়ুন: পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করলেন পুতিন
এই পরিদর্শন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে গত নভেম্বরে মিসরে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাশিয়া সেই আলোচনাও স্থগিত করে এবং এরপর কোনও পক্ষই নতুন তারিখ নির্ধারণ করেনি।
♦ রাশিয়া কি এর আগেও চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল?
চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের এই চুক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক পন্থা বলা সত্ত্বেও তা রক্ষা করতে চায় বলে জানিয়েছিল।
যৌথভাবে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে; যা এই বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। উভয় পক্ষই পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ যে কোনও মূল্যে এড়ানো উচিত বলে জোর দিয়ে আসছে।
তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন গত ৬০ বছরের যে কোনও সময়ের তুলনায় দুই দেশকে সরাসরি সংঘর্ষের কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে।
• আরও পড়ুন: পশ্চিমকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন?
রাশিয়া তার ভূখণ্ড পরিদর্শনের অনুমতি না দিয়ে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর মস্কো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাশিয়াকে ‘পরাজিত’ করার জন্য পশ্চিমের সংকল্প অনুযায়ী ২০২৬ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চুক্তিটি পুনর্নবীকরণ থেকে বিরত থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
♦ এখন কী ঘটছে?
গত বছর রাশিয়া বলেছিল, পারমাণবিক সংঘর্ষের ঝুঁকি একেবারে বাস্তব এবং এই ঝুঁকিকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। যে কোনও মূল্যে তা এড়ানো উচিত।
স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের কয়েক বছরের টানাপোড়েনের পর পরে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র আকস্মিকভাবে ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পরিদর্শকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন।
তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মস্কোর অস্ত্রাগারের আকার ও শক্তির কথা বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব উপায় ব্যবহার করতে প্রস্তুত আছেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস