পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব। রাশিয়া কখনই তার সমাজকে বিভক্ত করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার করবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ (স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশান ট্রিটি) স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দু’দিন আগে মঙ্গলবার সংসদে দেওয়া এক ভাষণে এই চুক্তিতে রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করেছেন তিনি।

পার্লামেন্টে ভাষণের শেষে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আজ এই বিষয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছি যে, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তিতে রাশিয়া তার অংশগ্রহণ স্থগিত করছে।

২০১০ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ‘দ্য নিউ স্টার্ট’ নামের দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্বের দুই শীর্ষ পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত বছর এই চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়।

চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড, স্থল ও সাবমেরিন-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান মোতায়েনের লাগাম টানা হয়।

বিশ্বে বর্তমানে রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির কাছে প্রায় ৬ হাজার ওয়ারহেড রয়েছে। নিউ স্টার্ট চুক্তি অনুযায়ী, এই দুই দেশের কেউই এক হাজার ৫৫০টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন করতে পারতো না।

যৌথভাবে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে; যা এই বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।

পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনে রাশিয়ার বছরব্যাপী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈশ্বিক যুদ্ধে মস্কোকে পরাজিত করা যাবে, এমন ভুল বিশ্বাসে ভর করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছিল। কিন্তু পশ্চিমা-সমর্থিত ইউক্রেন রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের এই দ্বীপ ভূখণ্ড দখলে নেয় রাশিয়া।

পুতিন বলেন, পশ্চিমারা বিশৃঙ্খলা আর যুদ্ধের বীজ বপন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বোতল থেকে ভূতকে বের করে দিয়েছে।

‘ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভ সরকার ও তার পশ্চিমা শাসকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে; যারা রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এই দেশটিকে কার্যকরভাবে দখল করেছে।’ রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা স্থানীয় সংঘাতকে বৈশ্বিক সংঘর্ষে রূপান্তর করতে চায়, আমরা এটা বুঝতে পারি এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব।’ ৭০ বছর বয়সী ক্রেমলিনের এই প্রধান বলেন, রাশিয়া কখনই তার সমাজকে বিভক্ত করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার করবে না। বেশিরভাগ রাশিয়ানই যুদ্ধ সমর্থন করছেন বলে জানান তিনি।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসএস