রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তি ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গন। যুক্তরাষ্ট্র দু’দিন আগে অভিযোগ করেছে, রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করছে চীন। এ নিয়ে আরও ঘোলা হয়েছে পরিস্থিতি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চীনের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ওয়েং উই-র সঙ্গে জার্মানির মিউনিখে একটি বৈঠক করেন।

ওই বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যম এনবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্লিংকেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে আমরা দেখেছি চীন রাশিয়াকে রাজনৈতিক ও অন্যান্য  এবং অ-প্রাণঘাতী সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু আমরা খুবই চিন্তিত কারণ তারা এখন রাশিয়াকে মারণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়াকে যদি অস্ত্র দেওয়া হয় তাহলে ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের চরম পরিণতি ঘটবে।’

চীন কি রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করছে?

এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হলেও অভিযুক্ত চীন এখনো বিষয়টি পরিষ্কার করেনি।

গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সফরে যান। সেখানে কিয়েভকে আরও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে আসেন তিনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন, তারা বেশ অবাক হয়েছেন কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে যাওয়ার পরও রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে এখনো চুপ করে আছে এশিয়ার জায়ান্টরা।

এছাড়া যুদ্ধের প্রায় এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি বেইজিং। উল্টো দেশটি বার বার জাহির করতে চেয়েছে, রাশিয়াই হুমকির মুখে ছিল, এ কারণে পুতিন ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

আরেকটি বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা চীনের সমালোচনা করলেও এ বিষয়টি নিয়ে একটু বিব্রত না দেশটি। বেইজিংয়ের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং উই বলেছেন, ‘চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং তৃতীয় কোনো দেশের ওপর আক্রমণ না করার ভিত্তিতে। যেটি দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অধিকার। রাশিয়ার-চীনের সম্পর্কের ওপর জবরদস্তি এবং কোনো আঙ্গুল তোলা আমরা মেনে নেব না।’

উল্টো তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগুনে জ্বালানি না ঢেলে সেটি নেভানো উচিত।’

চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দেবে এমন কোনো ইঙ্গিত কী যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে?

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিত পেয়েছেন। তারা যা বুঝতে পেরেছেন সেটি হলো, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে চায়। কিন্তু এমনভাবে দেবে যেন সেটি প্রকাশ না পায় বা তারা ধরা না পড়ে।  

ওই কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, তারা যেসব গোপন তথ্য পেয়েছেন সেগুলোর বিস্তারিত জানাবেন না। তবে তারা বিষয়টি নিয়ে এতটাই চিন্তিত যে এ ব্যাপারে মিত্রদের অবহিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীন দুই দিক দিয়েই কাজ করছে। এক দিক দিয়ে তারা বলছে শান্তি চায়। অন্যদিকে রাশিয়াকে সহায়তা করার পথ খুঁজছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে নিজ সেনাদের হামলা করার নির্দেশ দেওয়ার আগে বেইজিংয়ে যান রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিনয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর তারা ঘোষণা দেন চীন-রাশিয়ার মধ্যে হবে ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্ব। যা পশ্চিমাদের চিন্তায় ফেলে।

বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলো চীনের কার্যক্রম বেশ কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ তাদের শঙ্কা, যদি ইউক্রেনে রাশিয়া চীনের কোনো সহায়তা পেয়ে সাফল্য পায় তাহলে চীন তাইওয়ান দখলের দিকে নজর দিতে পারে।

চীনের প্রভাবশালী কূটনীতিক ওয়েং উই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পশ্চিমা অন্য দেশগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যে সংকট চলছে সেটি চীন দেখতে চায় না। তবে কিছু দেশ চায় তা চলতে থাকুক। চীন সংকট বৃদ্ধি নিয়ে খুবই চিন্তিত। চীন এ যুদ্ধের কোনো অংশ না, কিন্তু আমরা তবুও বসে নেই। এছাড়া অন্যদের মতো আমরা আগুনে জ্বালানি ঢালছি (উত্তেজনায় উস্কানি) না।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা উত্তেজনা বৃদ্ধির পুরোপুরি বিরুদ্ধে। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে যা করার দরকার চীন তার সবই করেছে। চীন আলোচনার ওপরই সবচেয়ে জোর দেবে….কিছু মানুষ অবশ্য সফল আলোচনার মাধ্যমে লড়াই বন্ধ হোক চায় না। তারা ইউক্রেনীয়দের জীবন ও মৃত্যুর পরোয়া করে না, ইউরোপের ক্ষতির কথা চিন্তা করে না, কিন্তু তাদের মাথায় অনেক হিসাব-নিকাশ আছে।’

এমটিআই