শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর শহরতলী বিয়াগামাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এক শিশু তার বাড়িতে পড়াশোনা করছে। ছবিটি ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তোলা

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। আর এর মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে বিদ্যুতের দাম আবারও বেড়েছে ২৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎমূল্য বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

গত কয়েক মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ বোর্ড ২৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে বলে কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেউলিয়া এই দ্বীপ দেশটি আইএমএফের ঋণ সুরক্ষিত করার জন্য এ নিয়ে গত কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ব্যাপকভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করল।

মূলত গত বছর শ্রীলঙ্কা অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়। সেই সংকট এখনও চলছে এবং এর জেরেই শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে রয়েছে।

এএফপি বলছে, শ্রীলঙ্কার সরকার তার ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঋণে খেলাপি হয়েছে এবং নিজেদের বিপর্যস্ত আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে এক বেলআউট প্যাকেজ চূড়ান্ত করছে। আর এর মধ্যেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই ঘটনা ঘটল।

মূল্যবৃদ্ধির খবর দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎমন্ত্রী কাঞ্চন ওয়াজিসেকারা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে বেলআউট প্যাকেজের আবেদন জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা থেকে আমাদের কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেসব শর্তের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও রয়েছে।

এদিকে মূল্যবৃদ্ধির পর আগামী দিনে শ্রীলঙ্কা নাগরিকদের প্রতি ঘণ্টায় কিলোওয়াট প্রতি বিদ্যুতের দাম দিতে হবে কমপক্ষে ৩০ রুপি করে। কাঞ্চন ওয়াজিসেকারার ভাষায়, ‘খরচ যোগানোর জন্য আমাদের রাজস্ব আরও বৃদ্ধি করতে হবে।’

মূলত জেনারেটরের জন্য আমদানি করা জ্বালানি কেনার জন্য ইউটিলিটিগুলোর অর্থের অভাব হওয়ায় গত বছর শ্রীলঙ্কা দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হয়েছিল। আর তাই ওয়াজিসেকারা জানিয়েছেন, ‘বর্ধিত রাজস্বের কারণে আমরা আজ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে সক্ষম হবো।’

উল্লেখ্য, ছয় মাস আগেও শ্রীলঙ্কা সরকার বিদ্যুতের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছিল। সেসময় একধাক্কায় বিদ্যুতের দাম বাড়ে ২৬৫ শতাংশ। এছাড়া বেলআউট প্যাকেজ দ্রুত পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। 

মূলত গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায় শ্রীলঙ্কায় শুরু হয় আর্থিক সংকট। পরে দেশবাসীর ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। আর এরপরই প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপর থেকেই আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কা।

টিএম